chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে আবারো গুলি, নিহত ১৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে অভ্যুত্থান বিরোধীদের ওপর আবারো গুলি চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা রক্ষীরা। গুলিতে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর জানা গেছে।

এতে আহত হয়েছেন আরো অনেকে। নিহতদের মধ্যে ১৯ বছর বয়সী একজন নারী ও ১৪ বছরের এক কিশোর রয়েছে।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বুধবার বিক্ষোভ চলাকালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর মধ্যে দেশটির দ্বিতীয় বড় শহর মান্দালয়ে নিহত হয়েছেন তিনজন, পাঁচ জন মারা গেছেন মনুয়ায়। মাইঙ্গানে মাথায় গুলিতে নিহত হয়েছে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর এবং গুলিতে আহত হয়েছে আরো অনেকে। এছাড়া ইয়াঙ্গুন এবং মিইয়ইগেইনে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বুধবারের সহিংসতায় প্রথমে সাতজন নিশ্চিত হওয়া গেলেও সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন চিকিৎসক বলেছেন, মান্দালয়ে নিহতদের একজনের বুক ভেদ করে গুলি ঢুকেছে। দ্বিতীয় একজন নারী। ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণীর মাথা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দুইজনই ঘটনাস্থলে মারা যান।

ফ্রন্টিয়ার ম্যাগাজিন জানিয়েছে, মান্দালয়ে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে পুলিশ প্রথমে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছু সময় পরে তারা ফের একই স্থানে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায়।

মনুয়ায একজন উদ্ধারকারী জানিয়েছেন, তিনি চারজনের লাশ দেখেছেন। অবশ্য মনুয়া গেজেট নামের স্থানীয় একটি সংবাদপত্র নিহতের সংখ্যা ৫ বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশের গুলি বর্ষণ ও তাতে অসংখ্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

মিয়ানমার নাউ ওয়েবসাইটের খবরে জানা গেছে, ইয়াঙ্গুনে ৩০০ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাছাড়া তাদের ওপর চড়াও হয়ে ভয়াবহ লাঠিচার্জ করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, শত শত মানুষকে সেনা ও পুলিশি তদারকিতে ট্রাকে তোলা হচ্ছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে সেখানে গোলযোগ চলে আসছে। অভ্যুত্থানের পর দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু চিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে এনএলডি নিরঙ্কশ জয় পেলেও সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। তারা নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে।

দেশটির সেনাবাহিনী সে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়নি। এবং এটিকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে অভিহিত করে নির্বাচিত সরকাকে উৎখাত করে দেয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ওইদিন ভোরে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলডির শীর্ষ বেশ কিছু নেতাকে গ্রেপ্তারের পর এক বছরের জন্য মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী। ক্ষমতায় বসেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

সেনাবাহিনীর এ ক্ষমতাগ্রহণের প্রতিবাদে এবং গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ। আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা জানানো হয় অভ্যুত্থানের।

দেশটিতে এরই মধ্যে বুধবারের সহিংসতা ছাড়াও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় ২১ আন্দোলনকারী ও এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর