chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রেজাউলের সাথে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার শ্রী অনিন্দ্য ব্যানার্জী।

বুধবার (৩ মার্চ) সকালে চসিকের টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী নগর ভবনে মেয়রের অফিস কক্ষে এ সাক্ষাৎ করেন তিনি।

এসময় ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার বলেন, উন্নয়নের প্রধান পূর্বশর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নিশ্চিত করেছেন বলেই বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরাগান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সবধরনের সহযোগিতা করায় ভারতের অনেকেই এবং বিদেশী কোন কোন রাষ্ট্র সমালোচনা করেছিল। এই ভূমিকাকে যারা ঝুঁকিপুর্ণ বলে মন্তব্য করেছিলো স্বাধীনতার পর তৎকালীন পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষও বলেছিল তারা বোঝামুক্ত।

‘আর এখন পাকিস্তানে অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তা থেকে পাকিস্তানের অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ বাংলাদেশ এখন উদীয়মান ব্যাঘ্র।’

তিনি ওষুধ শিল্প, তৈরি পোশাক রফতানি শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাতে বাংলাদেশ বেশ ভাল অবস্থানে আছে বলে মন্তব্য করে বলেন, ক্রম বিকাশমান এই খাতগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে গতিশীলতা এনেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্প দৃশ্যমান। এই খাতে ধারাবাহিক উন্নয়ন দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত ও সমৃদ্ধ করবে।

তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের বহুমুখী ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে রিজিওনাল কানেক্টিভিটি সংযুক্ত হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই উপকৃত হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, পতেঙ্গায় উপকূলবর্তী বে-টার্মিনাল এবং মহেষখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটির সাথে সংযুক্ত হবে এবং বৈশ্বিক আর্থিক সমৃদ্ধির অংশীদার হবে।

তিনি মেয়রকে অবহিত করেন যে, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে উপলক্ষ করে মার্চের শেষের দিকে ভারতের একটি চৌকষ সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল আসবে। এই দলটির সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত থিয়েটার ইনস্টিটিউট হল চট্টগ্রামে করার পরিকল্পনা আছে।

তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত টিআইসি স্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, ছোট্ট পরিসরের হলেও এই নাট্যভূমি ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রটি অত্যাধুনিক ও নান্দনিক স্থাপনা। আমি সেখানে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছি। এর আধুনিকায়ন ও সরঞ্জাম সংযোজনে ভারত দু’কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গা ও পরিসর থাকলে আরো বড় অংকের অনুদান দেয়ার আগ্রহ ছিলো।

তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, অনেকেই আশংকা করেছিলেন কোভিড-১৯ সংক্রামণ ছোবলে বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বিশ্বের অনেক উন্নত ও ক্ষমতাধর দেশের চেয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

‘বাংলাদেশ দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে এবং এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। তিনি চট্টগ্রামরে সৌন্দর্যবর্ধন ও মশার উপদ্রব কমানোর জন্য সিটি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’

মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ও অবদানের জন্য সেদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং অশেষ ঋণ স্বীকার করি। একাত্তরে ভারত আমাদের দেশের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের সেনা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও জওয়ান প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।

তিনি বলেন, যারা একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে মন্দবাক্য উচ্চারণ করেছিল তারা এখন বাংলাদেশের নজিরবিহীন উন্নতি দেখে লজ্জা পায় এবং তারা স্বীকার করে যে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।

তিনি ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের চট্টগ্রাম বন্দরের বহমুখী ব্যবহারের মতামতের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি চট্টগ্রাম বন্দরের বহুমুখী ব্যবহারে রিজিওনাল ও ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটির সংযুক্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরো বলেন, নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন পরিকল্পিতভাবে করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামে মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে। সে কারণে প্রকল্পের আওতায় খালের কোন কোন স্থানে বাঁধ দেয়ার পানি জমে আছে। এ জন্য মশা প্রজনন হচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মশার উপদ্রব অনেক লাঘব হবে।

এই সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ।

এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর