chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া  শান্তিপূর্ণভাবে মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

সকালে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ উপস্থিতি থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে ভোটার উপস্থিতি। প্রথমবারের মতো পৌরসভা ২টি তে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

মিরসরাইতে কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বারইয়ারহাটে মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে এবং কাউন্সিলর পদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বারইয়ারহাটে ভোট কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের দেখা যায়নি।

সরজমিনে সকাল ৮টা ৫০মিনিটে মিরসরাই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কেন্দ্র মিরসরাই সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। এখানে ৭টি বুথে ভোটার ২ হাজার ৪শত ২১। ভোট শুরুর প্রায় ১ ঘন্টা পর ভোট সংগ্রহ হয় ৫০টি।

ভোটারদের অভিযোগ ইভিএমে ভোট গ্রহণে সময় লাগছে বেশী। অনেকে ভোটার আইডি কার্ড আনলেও ইভিএমে ভোটার নাম্বার খুঁজে পাচ্ছেন না।
ভোট দিতে আসা এক ভোটার বলেন, আমি ভোটার আইডি কার্ড সঙ্গে আনলেও ভোটার নাম্বার খুঁজে পেতে অনেক সময় লেগে যায়।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ইভিএমে ভোট প্রদানে ভোটারদের অতীত অভিজ্ঞতা না থাকায় ভোট গ্রহণে সময় একটু বেশী লাগছে। তাছাড়া অধিকাংশ ভোটার; ভোটার নম্বর ছাড়া ভোট কেন্দ্রে আসাতে তাদের নম্বর খুঁজতে সময় বেশী ব্যয় হচ্ছে।

সকাল সাড়ে ৯টায় বারইয়ারহাট পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বারইয়ারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নারী-পুরুষ ভোটারের দীর্ঘ লাইন। ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট থাকলেও দেখা যায়নি বিএনপি প্রার্থীর কোন এজেন্টকে।

এখানে ২টি বুথে মোট ভোটার ৬২৪ জন। সকাল সাড়ে ৯টায় ভোট পড়ে ৭০টি। ইভিএমে জটিলতার কারণে কয়েকবার চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম খোকন। তিনি অভিযোগ করেন ইভিএমে ভোট সুষ্ঠ হলেও ভোট গ্রহণে সময় লাগছে বেশী।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, অনেক ভোটারের হাতের আঙ্গুলের চাপ ইভিএম মেশিনে মিল না পাওয়ায় ভোট দেওয়াতে সময় লাগে বেশী। তবে কয়েকবার চেষ্ঠার পর ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। সকালে বিএনপি প্রার্থীর কোন এজেন্ট কেন্দ্রে আসেনি বলে তিনি জানান।

সকাল ১০ টা ১৫মিনিটে বারইয়ারহাট পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হিঙ্গুলী বোর্ড অফিস কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন বিএনপি প্রার্থী দিদারুল আলম মিয়াজী। তিনি ভোট প্রদান শেষে অভিযোগ করেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পৌরসভা নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি।

তফশীল ঘোষণার পর থেকে আমার বাড়িতে ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আমি এজেন্ট দিলেও কোন কেন্দ্রে এজেন্টকে থাকতে দেওয়া হয়নি। এজেন্টদেরকে মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে বাধ্যতামূলক ভোট নিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ইভিএম একটি বিতর্কিত পদ্ধতি। এটি দিয়ে সুষ্ঠ ভোট গ্রহণ সম্ভব নয়। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন বলেন জানান।’

দুই পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও মিরসরাই পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের নাজিরগ্রাম শফি উদ্দিন পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘিরে দিনভর ছিলো উত্তেজনা। এখানে মেয়র পদে এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট না হলেও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হয়।

সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পুলিশ, বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশ ১ প্রার্থী সহ ৬ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। পরবর্তীতে তাদের থেকে মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় রামদা, ক্রীজ সহ দেশীয় অস্ত্র।

এসময় পুলিশ সহ আহত হয়ে কয়েকজন। ভোট কেন্দ্রে যাওয়া অনেক ভোটারকে মাঝ পথ থেকে তাড়িয়ে দিতে দেখা যায়। বিভিন্ন রাস্তার মুখে হাতে লাঠি নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়া বহিরাগত সন্ত্রাসীদের।

এদিকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভায় ৫৫% ভোট সংগ্রহ হয়েছে বলে দাবী করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও মিরসরাই পৌরসভা নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা মো. ফারুক হোছাইন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মিরসরাই পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা সকাল থেকে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিচ্ছে। পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড ও ৮ নং ওয়ার্ডে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানে ভোটাররা অভ্যস্ত না হওয়ায় ভোট গ্রহণ একটু স্লো ছিলো।

তবে নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে ২দিন মগ ভোটিং প্রশিক্ষণ দিয়েছিলো প্রতিটি কেন্দ্রে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন বলে তিনি দাবী করেন।

প্রসঙ্গত: মিরসরাই পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১২ হাজার ৮শত ৫৫ জন। কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন আর সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

বারইয়ারহাট পৌরসভায় মোট ভোটার ৮ হাজার ৬’শত ৫৫ জন। এখানে মেয়র পদে ২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর