chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চমেকে টিকা প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভীড়

ইফতেখার নিলয় : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) করোনা টিকা প্রত্যাশী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের উপচে পড়া ভীড় তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে ১৫টি কেন্দ্রে চলছে করোনার টিকা প্রদানের কাজ। চট্টগ্রাম মেডিকেল এর মধ্যে অন্যতম। চমেক ছাড়াও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সেনানিবাস হাসপাতাল, চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল, সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী হাসপাতাল সহ আরোকিছু কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।

রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকালে টিকার প্রত্যাশায় লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। পুরুষদের সিরিয়াল বেড়ে চমেকের প্রধান বারান্দা ছাড়িয়ে রাস্তায়ও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে তাদের। ভীড়ের মাঝে সেখানে কোনোপ্রকার সামাজিক দূরত্বের চিহ্ন চোখে পড়েনি।

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে চমেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয় এবং শেষ হয় দুপুর ২টায়। চমেকের প্রধান বারান্দায় টিকার আশায় সিরিয়ালে অপেক্ষায় থাকা শতশত মানুষের কেউই জানেন না কখন পাবেন কাঙ্ক্ষিত টিকার দেখা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা চট্টলার খবর কে বলেন, ‘পূর্বে আরো দুই ফ্লোরে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিলো, কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র নীচতলার প্রধান বারান্দায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে এক ফ্লোরেই শত শত টিকা প্রত্যাশীদের চাপ সামলাতে হচ্ছে।

শত শত টিকা প্রত্যাশীদের ভীড় সামলাতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর পর মাইকিং করে দেওয়া হচ্ছে নিয়মানুযায়ী সিরিয়াল মানার নির্দেশনাও। এসবের মাঝে আবার টিকা নিতে আসা নারী-পুরুষেরা সিরিয়ালে নিজের অবস্থান নিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন বাক-বিতণ্ডায়।

টিকা নিতে আসা সালাউদ্দীন নামের একজন আমাদের বলেন, গতকাল টিকা নিতে এসে অধিক ভীড়ের কারণে টিকা নিতে ব্যর্থ হয়ে আবার ফিরে গেছেন বাসায়। আজ পুনরায় টিকা নিতে এসেও দেখছেন সমপরিমাণ ভীড়। এবং ব্যবস্থাপনা নিয়েও তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

এদিকে বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী একত্রে টিকা নিতে এসে দু’জন দু সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে সময় পার করতে হচ্ছে উৎকন্ঠায়৷ মানুষের ভীড়ে তীব্র গরম সহ্য করে সুস্থ থাকাই মুশকিল। তাই টিকা নিতে এসে শঙ্কা বাড়ছে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার।

টিকা নিতে আসা শামসুন নাহার নামের এক নারী বলেন, ‘এতদিন শুনেছি মানুষের ভীড় কম। আজ এত মানুষ দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আমার ছেলে আমাকে নিয়ে এসেছে। ভীড়ের মাঝে ছেলে আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।’

এর পূর্বে, ক্যাটাগরিভিত্তিক টিকা নেওয়ার ফ্লোর ভাগ করে দেওয়া ছিলো, যার ফলে ভোগান্তি তুলনামূলক কম ছিলো। বর্তমানে শুধুমাত্র একটি ফ্লোরে সকল ক্যাটাগরির মানুষদের টিকা দেওয়ায় টিকা প্রত্যাশীদের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে প্রতিদিন। যার ফলে বিপাকে পড়েছেন টিকা নিতে আসা শত শত নারী-পুরুষ, আনসার, পুলিশ ও টিকা প্রদানকারী কর্মকর্তারাও।

যেহেতু ৪০ এবং এর অধিক বয়সীরা টিকা নিতে পারছেন, তাই এই বয়সী নারী-পুরুষ শারীরিকভাবে অনেকখানি অক্ষম হওয়ায়; দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষত পঞ্চাশোর্ধ্বদের পড়তে হচ্ছে এ সমস্যায় বেশি।

টিকা কেন্দ্রে আসা মানুষদের ভীড় সামলাতে কিছু পুলিশ ও আনসার সদস্য ব্যাতীত স্বেচ্ছাসেবকের ঘাটতিও চোখে পড়েছে। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের এই ভীড় সামলাতে একপ্রকার হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চমেকে দায়িত্বরত আনসার সদস্য জুয়েল বলেন, ‘আজকেই প্রথম এত ভীড়। তবে ভীড় হলেও সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। সবাই নিয়ম মেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দের সহযোগিতা করলে টিকা প্রদান কার্যক্রম মসৃণ হবে।’

যে সকল ছেলে-মেয়েরা মা-বাবা কে টিকা নিতে নিয়ে এসেছেন চমেকে, তাদের মাঝে দুশ্চিন্তার প্রভাব বেশি লক্ষ করা গেছে। অভিভাবকের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ও ব্যাগ নিয়ে তাদেরও লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সার্বক্ষণিক। এ জনসমুদ্রে বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মাঝে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর চট্টলার খবরকে বলেন, ‘আজকের দিনে ১০ টি বুথের আওতায় ২১৬৯ জন টিকা নিয়েছেন। টিকা প্রত্যাশীদের ভীড় বেড়ে যাওয়ায় আগামীকাল চমেক লাইব্রেরিতে নতুন করে বসছে আরো ১০টি বুথ। যেখানে ৯টি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং একটি থাকবে সাংবাদিকদের জন্য।’
জনসমুদ্রের ভীড় ঠেলে যারা টিকা নিয়ে বেরিয়ে আসছেন, তাদের চোখে-মুখে দেখা মিলছে বিজয়ের হাসির।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, শনিবার রাত পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনার টিকার জন্য আবেদন করেছেন ৩,৬৯,৪৩৬ জন। শনিবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫১ জন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে যারা টিকা নিতে আসবেন, তাদের জন্য নিয়মেও পরিবর্তন আসছে। এন.আই.ডি কার্ডের মূল ও ফটোকপির পাশাপাশি বহন করতে হবে টিকা কার্ডের কাগজ দুই কপি।
চট্টগ্রামে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনা টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর