chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হালদার রাউজান অংশে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

ডেস্ক নিউজ : চট্টগ্রামের হালদা নদী বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। প্রতিবছর এখান থেকেই রুই মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এ নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

হালদা নদীর পাড়ের রাউজান সীমান্ত অংশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নির্মাণকাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এ ভাস্কর্য।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাতির জনকের এ ভাস্কর্যটি তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও হালদা গবেষক প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।

গণমাধ্যমকে ডা. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, আমরা হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দাবি করে আসছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করার মাধ্যমে হালদা নদী তার ঐতিহ্যে ফিরে পেয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের হালদা নদী এশিয়া মহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। খাগড়াছড়ির পাতাছড়া থেকে নেমে আসা একশ ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে প্রাকৃতিকভাবে চার প্রজাতির মা মাছ ডিম ছাড়ে। হালদা থেকে প্রতিদিন ১৮ কোটি পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

প্রতিবছর মা মাছ এখানে অবাধে রেণু (ডিম) ফোটাতে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেয়। প্রাকৃতিকভাবে মা-মাছ ডিম ছাড়ে বলে দুই পাড়ের মানুষকে সমৃদ্ধ করছে এ নদী। জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান ৮০০ কোটি টাকা। ফলে মৎস্য ও হালদা নদীপ্রেমিরা ‘হালদা নদী রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে নদীটিকে অভয়াশ্রমসহ জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিল।

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকায় নদীর পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে শিল্প-কারখানা । এ সকল কারখানার দূষিত বর্জ্যে হালদায় মাছ মারা যাওয়ার ঘটনায় পরিবেশবিদ ও নদী গবেষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন অনেক আগে থেকেই।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাদের মতে, হেরিটেজ ঘোষণায় হালদা নদীর পরিচিতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হালদায় মাছের অভয়াশ্রমের পাশাপাশি প্রকৃতিতে আসবে নতুন প্রাণ।

উল্লেখ্য,হালদা নদীর মদুনাঘাট থেকে সর্তার ঘাট পর্যন্ত অংশে সরকারি জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটি কি রকম হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হালদার পাড়ের যে পাশে রাউজান অংশ, সেখানে ম্যুরালটি হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে এই নদীটা মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি হালদা নদী আরও বেশি সুরক্ষিত থাকবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে সর্বমোট ৭৬১টি নদী রয়েছে। যার মধ্যে হালদাই একমাত্র নদী যেখানে রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। ১৯৪৫ সালে সালে এ নদীর রেণু পোনার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার। ২০০৪ সালে এসে এ মাছের ডিমের পরিমাণ কমতে কমতে ২০ কেজিতে চলে আসে। পরে সরকারের নানান কার্যকরী উদ্যোগে রেণু পোনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। হালদা একটি ইউনিক নদী। যে নদীতে ডলফিন আছে, বুঝতে হবে সেই নদীতে দূষণ নেই। এরা প্রচুর মাছ খায়। মাছ না থাকলে এরা থাকবে না।

ইনি/চখ/এএমএস

এই বিভাগের আরও খবর