chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কর্ণফুলী নদী পারাপার

ইফতেখার নিলয় :চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন নদী পারাপার হচ্ছে অসংখ্য যাত্রী। ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অধিক যাত্রী নিয়ে নদী পারাপার হতে গিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সাম্পানের সক্ষমতারও বেহাল দশা যেন নজরেই পড়ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

নদী পারাপারের প্রধান শর্ত নিরাপত্তা। সরেজমিনে (২৩ ফেব্রুয়ারি) গিয়ে দেখা গেছে, নিরাপত্তার ইস্যু কে তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন যাত্রী পারাপার করছে সাম্পানের মাঝিরা। সাম্পানের মাঝিদের কাছে নেই লাইফ জ্যাকেটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। কিছু কিছু সাম্পানে তো একেবারেই নেই লাইফ জ্যাকেট ও টিউবের চিহ্ন।

এক সাম্পানে আট জন বহন করার নিয়ম থাকলেও নিয়ম না মেনেই বহন করা হচ্ছে আট জনের অধিক যাত্রী। যার ফলে বাড়ছে মাঝ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা। সাম্পানের ফিটনেসের দিকে নজর দিলে চোখে নড়বড়ে অবস্থার চিত্র ফুটে উঠে।

যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, “বাংলাবাজার ঘাটে নিয়মিত-ই তাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাম্পানের যাতায়াত ভাড়া নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অসন্তুষ্টি তাদের মাঝে। এক সময়ের তিন টাকার ভাড়া বেড়ে গিয়ে এখন আট টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এমনকি কখনও কখনও বিশ টাকাও তাদের ভাড়া গুণতে হচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই।

নিরাপত্তা বলয়-বিহীন নদী পারাপার এবং পাশাপাশি অধিক যাত্রীর সাথে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়েও ভাড়া বেশি আদায় করার বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের মাঝে রয়েছে তুমুল হতাশা।“

এ বিষয়ে স্থানীয় সাম্পানের মাঝিদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, “তাদের নিজেদের-ই দিনাতিপাত করতে হয় চরম সংকটের মাঝে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে এত স্বল্প আয়ে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। এমন অবস্থায় লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করার মত সামর্থ্য তৈরি হয়নি তাদের।

আলতাফ নামের এক যাত্রী বলেছেন, “ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন তাকে এই রুটে যাতায়াত করতে হয়। ভাড়া নিয়ে প্রায়ই তিনি তারতম্য দেখতে পান। নিরাপত্তার বালাই তো নেই বললেই চলে।“

বাংলাদেশ লাইটার ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, “দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে কাজ করে আসছেন। মাঝি ও স্বার্থান্বেষী মহল এর পেছনে জড়িত। যাদের সদিচ্ছার অভাবে সম্ভব হচ্ছেনা এই সমস্যার সমাধান করা।“

বাংলাবাজার যাত্রী পারাপার কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি আবুল মনসুর আলী বাপ্পী জানান, “সাম্পান কর্তৃপক্ষ ইজারাদারদের মন্তব্যকে কোনোপ্রকারেই গ্রাহ্য করছেনা। তারা একপ্রকার স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যেই কার্যনির্বাহ করে যাচ্ছে।

সদরঘাটের চিত্রও একই। সেখানেও মানা হচ্ছেনা নিরাপত্তার ন্যূনতম নিয়ম-কানুন। সেখানে প্রতি নৌকায় বহন করা হয় আটের অধিক যাত্রী, আর যাত্রীদের ভাড়া গুণতে হচ্ছে দশ টাকা। স্থানীয় মাঝিদের কাছে লাইফ জ্যাকেটের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায়না। সাম্পানের ফিটনেসের অবস্থাও করুণ।

সদরঘাটের সাম্পানের যাত্রী ফাতেমার সাথে কথা বলে জানা যায়, “প্রতিদিন অতিরিক্ত যাত্রীর মাঝে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া আতঙ্কের মাঝে নদী পার হতে হয়। লাইফ জ্যাকেট চাওয়া হলেও মাঝিদের কাছে না থাকায় প্রতিদিন-ই অনিরাপদভাবে নদী পার হতে হয় তাদের। ভাড়া নিয়ে তারতম্যের ফলে মাঝিদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছেন তারা।

সদরঘাট নৌ-থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে, তিনি এ ব্যাপারে কোনোপ্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, এই পথে প্রতিদিন ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কাজে কয়েক শতাধিক মানুষ নদী পারাপার হচ্ছেন। নিরাপত্তা ও নিয়ম-কানুন না মেনে এমন যাতায়াতের ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। তাই যাত্রীরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান আশা করছেন প্রশাসনের তরফ থেকে।

এএমএস/চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর