চুরির মোবাইলে বাজার সয়লাব
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীতে চুরির মোবাইল বিক্রি যেনো থামছেই না। ছোট থেকে বড় সব মার্কেটে চোরাই মোবাইল ফোনের রমরমা ব্যবসা চলছে। কিছু অসাধু চক্র আছে যারা এ মোবাইল ফোন চুরি করে বা ছিনতাই করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছে। তাতে প্রতিনিয়ত ঠকছে ক্রেতারা। আবার কেউ এসব কম দামের মোবাইল ফোন নিয়ে ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছে। চোরাই মোবাইল ফোনে ক্রেতাদের লাভের চেয়ে ক্ষতির পাল্লাই ভারি হচ্ছে এমন তথ্য জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ব্যস্ততম মোড়,ভিড়ে ঠাসা যানবাহন কিংবা কমিউনিটি সেন্টারের ভিড়ের মধ্যে থেকে চুরি হচ্ছে মোবাইল ফোন সেট। আবার নগরজুড়ে বিভিন্ন স্পটে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন সেটও যাচ্ছে চোরাই কারবারিদের হাতে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চুরি হওয়া মোবাইল সেট রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। একথা প্রায় সবার জানা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ধরন পরিবর্তন হয়েছে চোরাই মোবাইল ব্যবসার। ঢাকা থেকে চুরি হওয়া মোবাইল ফোন যেমন রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসছে একইভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্নস্থান থেকে চুরি হওয়া মোবাইল সেট ঢাকায় যাচ্ছে। যেসব মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না সেসব মোবাইল সেট পাচার হয়ে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে। আবার ভারতে চুরি হওয়া মোবাইল সেট আসছে রিয়াজউদ্দিন বাজারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চট্টগ্রাম থেকে যেসব চোরাই মোবাইল ভারতে যাচ্ছে তা দেশটির উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। কলকাতায় বিক্রি করা হয় না। কারণ সেখানে বিক্রি করতে গেলে নানা সমস্যা হয়। ভারত থেকে চুরি হাজারো মোবাইল সেট রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসছে। মোবাইলের খুচরা যন্ত্রাংশ ঘোষণা দিয়ে এসব মোবাইল সেট আনা হচ্ছে। এতে চোরাই মোবাইল সেট খুঁজতে প্রশাসন তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিলেও ধরা পড়ার ভয় থাকে না।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দেদারসে বিক্রি হচ্ছে চোরাই মোবাইল সেট। বছরের পর বছর ধরে সেখানে চোরাই মোবাইল বিক্রি হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যে। জলসা মার্কেট, করিম সুপার মার্কেট, সিডিএ মার্কেট, নালা হকার মার্কেট, রিজোয়ান কমপ্লেক্স, কালাম মার্কেট, শাহ আমানত মাকেট, মক্কা টাওয়ার ও ইসলাম মার্কেট মিলে অন্তত শতাধিক মোবাইল বিক্রির দোকান রয়েছে। বিক্রি সেই সব দোকানে প্রকাশে বিক্রি হচ্ছে চোরাই মোবাইল সেট। শুধু কি মার্কেট? এছাড়া স্টেশন রোডে ভাসমান দোকানেও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব চোরাই মোবাইল সেট।
চট্টগ্রামে চুরি হওয়া মোবাইল সেট ভারতে আবার ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে চুরি হওয়া মোবাইল সেট আসছে রিয়াজউদ্দিন বাজারে। বাজারটিতে প্রতিদিন ঢুকছে হাজারো চোরাই মোবাইল। প্রতিনিয়ত বাড়ছে অবৈধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা। চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চুরি হওয়া মোবাইল সেট রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিক্রি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ধরন পরিবর্তন হয়েছে চোরাই মোবাইল ব্যবসার।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দশটি চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোবাইল আসছে এসব দোকানে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে পাওয়া চোরাই মোবাইল নিমিষেই ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তন করে তা বিক্রি করছে। প্রতিটি দোকানেই রয়েছে আইএমইআই চেঞ্জার সফটওয়ার। যার কারণে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃংখলা বাহিনী সদস্যরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ডাকাতি ও চুরি হওয়া মোবাইল রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে উদ্ধার করছে। সফটওয়ারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃংখলা রক্ষায় মারাত্মক হুমকি বলে করেন সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) কামরুল ইসলাম চট্টলার খবরকে বলেন, যখন আমাদের কাছে অভিযোগ আসে তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে চোরাই মোবাইল সেট জব্দ করি। এছাড়াও চোরাই মোবাইল ব্যবসার সাথে যারা যারা জড়িতে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। চোরাইর মোবাইল বাজারে বিক্রি না করার জন্য বিক্রেতাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে। ক্রেতারাও যদি একটু সচেতন হয় যাতে তাহলে চোরাই মোবাইল না কিনে ।
এসএএস/নচ