chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

‘১০টা হোন্ডা ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা’- সেদিন এখন নেই: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ: মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখন ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট হচ্ছে, যেখানে কারচুপি করার কোন সুযোগ নাই। যার যার ভোট সে নিজে দিতে পারে।

অতীতের নির্বাচনের প্রহসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘১০টা হোন্ডা ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা’-সেদিন আর এখন নেই বা ভোট বন্ধ থাকলেও একজনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতো- সেদিনও নেই।’

আজ মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিশেনে সভাপতিত্বে করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে যেহেতু সেবা পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে- স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন দেখলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে।

তিনি বলেন, বিএনপির আজকে সেই দশা। তারা যত বক্তৃতা দিক আর যত কথাই বলুক না কেন তাদের নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী যখন একটা দলের নেতা তখন তাদের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কিছুই থাকেনা। সেই বিশ্বাস ও আস্থা এখন আর তাদের প্রতি জনগণের নেই। আস্তে আস্তে সেই জায়গাটা সরে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক কথা, আমাদের দুর্ভাগ্য ও হাসি পায় যে, যাদের গায়ে দুর্নীতির ছাপ, যারা ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাদের নেতাকে কারাবরণ করতে হয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মামলা রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বিরোধী দলের নেতাকে হত্যার প্রচেষ্টার মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত তারা যদি জনগণের নেতৃত্বে থাকে তবে সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, মেয়র নির্বাচনে কমিশনারদের মধ্যে কখনো কখনো গোলমাল হয়, সেটা আলাদা। অতীতের নির্বাচনগুলো কেমন ছিল সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের গায়ে হাজারো কাদার ছিটা তারা আবার বড় কথা বলে কোন মুখে? সেটাই আমার প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, আজকাল অনেক কথা এবং অনেক সমালোচনা শুনি, অনেক প্রশ্ন বিএনপি নেতারা করেন। হ্যাঁ প্রশ্ন করেন, সমালোচনা করেন কিন্তু জানি না তারা আয়নায় নিজেদের চেহারাটা ভালভাবে দেখেন কি না। খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মেকআপের জন্য চেহারা আয়নায় দেখলেও নিজেদের কাজটাকে তারা দেখেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এত কথা অথচ এরকম একটা কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করলাম। সেটার প্রশংসা তো করতেই পারলো না। উল্টো বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে কেউ উঠবেন না। তিনি বলেন, তাহলে নদীটা পার হবে কিসে? যদি নৌপথে যেতে হয় তাহলে নৌকায় যেতে হবে। উপায় তো নেই। নৌকায় চড়তে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোনো অসুবিধে নেই। সবাইকে নেব, তবে দেখে নেব, কেউ আবার নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে।’ এ অধিবেশনটি প্রত্যক্ষ করতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদ ভবনে আসেন এবং অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন বলেও স্পিকার জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলাতে আমরা ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। সঙ্গে প্রণোদনা তো ছিলই। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা শুরু হলে আমরা অগ্রিম টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং দিয়েছি। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ শুনেছি। এখন তো ভ্যাকসিন এসেছে। ভ্যাকসিন নিজেই সেসবের উত্তর দিয়েছে।

তিনি বলেন, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর খারাপ কোনো রিঅ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম কারা করোনা ভ্যাকসিন পাবেন সেটাও আমরা ঠিক করে ফেলেছি। করোনার ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছেন তাদের এখনও মাস্ক পরে থাকতে হবে, সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাস না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত মাস্ক পরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে রওনা হয়ে আপনারা যদি মুন্সিগঞ্জে সেতুর পাড় পর্যন্ত যান তাহলেই দেখবেন রাস্তাটা কী রকম করেছি। এটা আদৌ বাংলাদেশ বলে মনে হবে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে এবং কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, উন্নয়নের প্রচেষ্টা থাকলে যে উন্নয়নটা করা যায় সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন ঘটলে স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে উল্লেখ করে বলেন,‘শতভাগই পাশ করানো হয়েছে কিন্তু তারা যখন শিক্ষা নেবে তখনই কে টিকবে আর কে টিকবেনা সেটা যাচাই করা যাবে। আর স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারায় শিক্ষার্থীদের যে দুঃখ এইচএসসি’র ফলাফলে সেটা দূর হবে।’

এর ফলে তারা পড়াশোনায় মনযোগী হয়ে আগামীতে আরো ভাল ফল করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর