বাবুল হত্যার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে : কাদেরের স্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরীর ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড়ে সংগঠিত বাবুল সর্দার হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নুসরাত জাহান।
বাবুল সর্দার হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আব্দুল কাদেরকে। এরপর থেকে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
আজ সোমবার ( ২৫ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন আব্দুল কাদেরের পরিবার।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নুসরাত জাহান বলেন, আমার স্বামী সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন না পেয়ে এলাকাবাসীর অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনের শুরুতে থেকেই আমার স্বামীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে নানান হুমকি দেয়া হচ্ছিল।
যে ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন আগে থেকেই মগপুকুড় গাড় এলাকায় গণসংযাগে ছিল তারা । অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর গণসংযোগ করছিলেন মতিয়ার পুলে । সেখান থেকে এসে এক ঘণ্টা ধরে তিনি মোস্তফা কামাল টিপুর বাসায় অবস্থান নেন । গণসংযোগ করতে করতে আমার স্বামী টিপুর বাসার কাছাকাছি পৌছাতেই নজরুল ইসলাম বাহাদুর সেই বাসা থেকে বের হন । তিনি বের হতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় । আর ওই সংঘর্ষে প্রাণ হারান বাবুল । এই হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিত। এখন কথা হল এই পরিকল্পনা কে করেছে ? যদি আব্দুল কাদের কিংবা তার কর্মী সমর্থকরা এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকতো তাহলে তারা নিশ্চয় একটা বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার হওয়ার অপেক্ষা করতো না ।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন আত্মরক্ষার জন্য তাহেরা ম্যানশন নামে একটা বাসায় ঢুকে গেট লাগিয়ে দেয় আমার স্বামী ও তার কর্মী সমর্থকরা । পরে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । এসময় তাদের কাছ থেকে কোন অস্ত্র পায়নি পুলিশ । যেখানে কাদেরের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি ছিল না সেখানে তাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে? তাছাড়া তাহেরা ম্যানশনে পুলিশ যাওয়ার আগে জিয়া নামে একজনের নেতৃত্বে কয়েকজন তাহেরা ম্যানশনের গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে কাদেরকে আক্রমণ করতে চায় । পরে জিয়া অস্ত্র সহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও অজানা কারণে তাকে ছেড়েও দেয় পুলিশ । কেন কাদের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে ছেড়ে দিল পুলিশ ? তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ । ওই সময় পুলিশের সামনেই বাহাদুরের কর্মী সমর্থকরা ভাঙচুর করছিল । অন্যদিকে ঘটনার শুরু থেকেই তাহেরা ম্যানশনে অবরুদ্ধ ছিল কাদের ও তার কর্মীরা।সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এই অবস্থায় কাদেরের পক্ষেতসিসিটিভি ভাঙ্গা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।
অন্যদিকে বাহাদুরের বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ ভাঙছে এমন ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে । ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজগুলো তারাই ভেঙ্গেছে বলে আমরা মনে করি । অন্যদিকে বাবলু খুন হন পিছন থেকে ছোঁড়া গুলিতে । গণসংযোগের পেছনের অংশে টির সাথে ছিলেন তিনি । সামনে ছিল বাহাদুর নিজে। আর বাহাদুরের উল্টো দিকে ছিল কাদেরের সমর্থকরা । তাহলে মিছিলের পেছনে থাকা বাবুলকে গুলি করলো কে?
নুসরাত জাহান বলেন, এ সময় টিপু কোথায় ছিল? কদমতলীর হারুন মার্ডার , ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কর্মী সাহেল খন্দকার , আগ্রাবাদে মারুফ চৌধুরী মিন্টু হত্যাকাণ্ডে মোস্তফা কামাল টিপু প্রকাশ কসাই টিপু জড়িত ছিল তা প্রশাসন অবহিত । পর পর এতাগুলো হত্যাকাণ্ডে যার সংশ্লিষ্টতা বাবুল হত্যাকাণ্ডের আগ মুহুর্তে তার বাসায় কি করচ্ছিলেন বাহাদুর? আর সংঘস মুহুর্তের মধ্যে শত শত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ভাংচুর চালায় বাহাদুরের সমর্থকরা।
একই সাথে তাহেরা ম্যানশনে কাদেরকে হামলার জন্য আক্রমণ চালায় একটি গ্রুপ। একই সময়ে ঘটনাস্থল থেকে দূরে আমাদের বাড়িতে ঢুকে ভাংচুর চালায় অন্য একটি গ্রুল । মুহূর্তের মধ্যে এত লোকজন তারা সংগঠিত করলো কিভাবে তাও আবার বেশিরভাগ বহিরাগত ? তবে তাদের এসব পরিকল্পনা করাই ছিল ? সেই সংঘর্ষের ঘটনায় কাদেরের সাথে থাকা ওবায়দুর রহমান মিন্টু ও গুরুতর আহত হয়েছে। তারা এখনো চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে বাহাদুরের সাথে থাকা বাবুল ছাড়া অন্য কেউ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এক্ষেত্রে বাবুল সংঘর্ষে মারা গেছে এই অভিযোগটিও সত্য নয় । বরং পরিকল্পিতভাবে বাবুলকে হত্যা করে সেই হত্যার দায় কাদেরের ঘাড়ে চাপাতেই অত্যান্ত সুচতুরভাবে ওই সংঘর্ষ বাধানানো হয়েছিল বলে আমরা মনে করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এই হত্যাকান্ডের পর পরই স্থানীয় প্রশাসনে রদবদল করা হলো । এর পর থেকে আব্দুল কাদেরের পক্ষে কাজ করা কর্মী সমর্থকদের প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে । বলা হচ্ছে আব্দুল কাদেরের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হবে না ।
নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় বিনা কারণে রাতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে । স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন করতে চাই নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই রদবদল পরিকল্পিত কিনা? এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা? আমাদের বিশ্বাস হত্যাকাণ্ড নয় বরং নির্বাচন করাই আমার স্বামীর অপরাধ এবং সেই অপরাধেই তাকে জেলে যেতে হয়েছে। যে নির্বাচন করার অপরাধে আমার স্বামী, পরিবার ও তার কর্মী সমর্থকদের এমন চরম মূল্য দিতে হয়েছে আমার স্বামীর হয়ে সে নির্বাচনী লড়াই এগিয়ে নিতে চাই আমি । পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামী আব্দুল কাদেরসহ তার কর্মী সমর্থকদের নি : শর্ত মুক্তি চাই ।
নুসরাত জাহান বলেন, আমরা চাই বাবুল হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত করে মূল সত্য বের করে আনুক প্রশাসন । এছাড়া দয়া করে আব্দুল কাদেরের কর্মী সমর্থকদের অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে হয়রানি বন্ধ করে উৎসবমুখর সুষ্ঠ নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করবো আমি ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল কাদেরের ছেলে কাদের অভি, মেয়ে সায়মা কাদের ও ফারজানা রহমান, কাদেরের ভাই আব্দুর রহমানের স্ত্রী নাজনীন আকতার, কাদেরের খালাতো বোন মনোয়ারা বেগম, খালাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা জাহেদ আহমদ, গ্রেপ্তার হওয়া ওবায়দুল কাদের মিন্টুর স্ত্রী ইসরাত জাহান রানী প্রমুখ।
এসএএস/নচ