chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ফুটপাত কার, হকার না পথচারীর ?

মেহেদী হাসান কামরুল: সড়কে পথচারীদের চলাচলের পথ ফুটপাত। কিন্তু সেই পথে পথচারী চলতে পারেনা। তাদের চলতে হয় ফুটপাতের নিচ দিয়ে যানবাহনের পথ ধরেই। এ চিত্র নগরের প্রায় সব কয়টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতের। কারণ ইতোমধ্যে নগরীর অধিকাংশ সড়কের ফুটপাত চলে গেছে হকারদের দখলে।  ফলে ফুটপাত আদৌতে কার, সেটা এখন জানার বিষয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেক সময় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) হকারদের উচ্ছেদ করে।  কিন্তু এতে কোন সমাধান আসে না। অদৃশ্য কোন ইশারায় আবারো দখলের মহোৎসব চলে ফুটপাতে।

সরেজমিনে নগরীর নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, জুবলী রোড, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুইনম্বর গেইট, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, এক্সেস রোড, ইপিজেড মোড়সহ নগরীর প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ফুটপাত ও মূল সড়ক দখল করে শত শত হকার নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।  স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে দোকান চালানোর অভিযোগ রয়েছে হকারদের বিরুদ্ধে।

ফুটপাত দখলের আগ্রাসন সবচেয়ে বেশি নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ ও ইপিজেড এলাকায়।  এ তিনটি স্থানকে ফুটপাত দখলের মূল পয়েন্ট ধরা হয়। নিউমার্কেট মোড় থেকে শুরু করে কাজির দেউড়ী, আগ্রাবাদের চৌমুহনী থেকে শুরু করে বারেক বিল্ডিং মোড়, মা ও শিশু হাসপাতালের মূল সড়ক, সরাকারি কর্ম ভবন, আখতারুজ্জামান সেন্টার থেকে শুরু করে সরকারি কমার্স কলেজ মোড়, অন্যদিকে  ইপিজেডের মোড় থেকে শুরু করে পতেঙ্গা পর্যন্ত।  একচুল পরিমাণ ফুটপাত খালি পাওয়া যায়নি। সব জায়গায় গড়ে উঠেছে দোকানপাট।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের সামনে ফুটপাত দখল করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বসেছে অবৈধ দোকান। চলছে রমরমা ব্যবসা। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীররা হাঁটছেন মূল সড়কে। অবৈধ এসব দোকান বসানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের সৌন্দর্য। ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা। তবে এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। নগরীর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেয়াজউদ্দিন বাজার ফুটওভার ব্রিজ এলাকা থেকে আজ দুপুর ১২টায় তোলা। আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

ফুটপাত দখলের মহোৎসবে শুধু যে পথচরীদের সমস্যা হচ্ছে তা নয়।  ফুটপাত না থাকায় সাধারণ পথচারীরা রাস্তায় নেমে আসে।  ফলে একদিকে যেমন ব্যস্ত সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয় তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।

মেয়র এসেছে, মেয়র গিয়েছে।  কিন্তু কেউই কথা রাখেননি।  হকারদের যথাযথ নিয়ম-নীতি বেঁধে দিয়ে ফুটপাথ সাধারণ জনগনের চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন সবাই।  কাগজে কলমে সেটির বাস্তবায়ন হয়নি ছিঁটে ফোঁটাও।  গেল বছরের ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন খোরশেদ আলম সুজন।  দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নগর ক্যারাভান সহ বিভিন্ন কর্মসূর্চী গ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিলো ফুটপাত হকারমুক্ত করা।  এ নিয়ে নগর ভবনে হকার নেতাদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করা হয়।  বৈঠকে হকারদের নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের পাশাপাশি বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হলে তাও তারা মানেনি।

ফুটপাত নিয়ে এতে টানাপোঁড়েনে ভুক্তভোগী হয়েছে সাধারণ মানুষ।  যারা অবৈধভাবে ফুটপাতে হাকার বসান আর নিয়মিত মাসোহারা নেন তারা আছেন বহালতবিয়তে। এদের বিরুদ্ধে কার্যত কোন ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের রয়েছে অনেকটা গা ছাড়া ভাব।  অনুন্ধানের বিষয় দায়িত্বশীল প্রশাসনও এসব টাকার ভাগ পান কিনা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন চট্টলার খবরকে বলেন, প্রতিদিন আগ্রাবাদ থেকে বাসায় ফেরার সময় হকারদের দৌরাত্ম্য লক্ষ করি। হাঁটার কোন অবস্থা নেই।  ফুটপাতের সামনে থেকে ভাসমান দোকান সরিয়ে নিতে বললে তারা মারমুখী আচরণ করে। একদিন প্রতিবাদ করে হেনস্তার স্বীকার হয়েছি।  তাই এখন আর প্রতিবাদ করি না।  ফুটপাত খেকোদের কাছে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়।

তিনি আরো বলেন, অনেকসময় হকার উচ্ছেদের নামে অভিযান করতে দেখি।  এগুলো সাধারণ মানুষের সামনে মূলা ঝুলিয়ে দেয়ার মতো। হকারদের নিয়মের মধ্যে আনতে হলে রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এসব ফুটপাতে প্রতিমাসে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়। এই টাকার ভাগ রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পর্যন্ত পৌঁছায়। ফলে এদের আশির্বাদপুষ্ট হকাররা ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকান চালায়।

তাই ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে হলে দুটি পক্ষকে সমন্বয় করে কাজ করে সততার সাথে কাজ করে যেতে হবে।

সড়ক ও ফুটপাত হকার মুক্ত রাখার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথের কাছে। এসময় তিনি  চট্টলার খবরকে বলেন, সড়কে কিংবা ফুটপাতে হকার বসতে না দেয়ার জন্যে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া আছে।  একদিক থেকে হকারদের তাড়িয়ে দেয়া হলে আরেক দিকে এসে বসে পড়ে।  এভাবে কতক্ষণ তাড়ানো যায় বলুন? এর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনেও কাজ করে।

হকাররা টাকা দিলে পুলিশ ম্যানেজ হয়ে যায় এমন প্রশ্নে তিনি জানান, অভিযোগ থাকতেই পারে।  এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমার কোন পুলিশ সদস্য যদি রাস্তায় হকারদের সাথে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকে তাহলে সরাসরি অভিযোগ জানানোর অনুরোধ রইলো।

এই বিভাগের আরও খবর