chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চবি’র গবেষণা : চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার করোনা ভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এর একদল গবেষক কর্তৃক চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার করোনা ভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচনের তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা থেকে করোনা ভাইরাসের (SARS-CoV-2) নমুনা সংগ্রহ করে প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার করোনা ভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) এর কাজ সম্পন্ন করেছি। পুরো গবেষণা কর্মটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জীব বিজ্ঞান অনুষদ ও বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ল্যাবে সম্পন্ন হয়েছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কাজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন করা এবং এটি সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের লজিস্টিকস, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন অত্যাবশ্যক ছিল তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট, কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন ধরনের কিটস এর সরবরাহ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আর এই বিষয়গুলোর উপর যথাযথভাবে নজর দিতে গিয়ে আমাদের কাজটি শেষ করতে প্রচুর সময় লেগেছে, যদিও প্রাথমিকভাবে আমরা কাজটি শুরু করেছিলাম গত জুলাই মাসে এবং যা আগস্টের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুরো গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক ও ড. এইচ. এম. আবদুল্লাহ আল মাসুদ।

এছাড়াও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, মো. আরিফ হোসাইন ও সজীব রুদ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী শান্তা পাল, এবং বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ছাত্র মো. ওমর ফারুক সম্পৃক্ত ছিল।

এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ডিজিস-১৯) এর উপর সার্বিক চিত্র তুলে ধরা, সে লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেকটি (১১টি) জেলার প্রত্যেক উপজেলা/থানা থেকে কোভিড পজিটিভ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছি। তারপর, আরএনএ এর পরিমাণ (কনসেনট্রেশন) ও গুণের (কোয়ালিটি) উপর ভিত্তি করে ৪৬টি নমুনা জিনোম সিকোয়েনসিং এর জন্য নির্বাচন করি। যার মধ্যে ৩৩টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স ৯৯% এর উপরে উন্মোচিত হয়েছে।

ইতোমধ্যে ১২ টি নমুনার জিনের বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (এওঝঅওউ) ডাটা বেইসে জমা দেওয়া হয়েছে।

কিছু প্রশ্নকে সামনে রেখে আমাদের এই গবেষণা কাজ সাজানো হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো চট্টগ্রামে ভাইরাসটি সম্ভাব্য কোন পথে প্রবেশ করে থাকতে পারে এবং এর মিউটেশন সম্পর্কে জানা।

প্রাথমিকভাবে ৩০টি জিনোম বিন্যাস (সিকোয়েন্স) বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন –NCBI, USA), আমরা ধারণা পাচ্ছি যে, চট্টগ্রাম বিভাগের ভাইরাসটির সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাসের দারুণ সাদৃশ্য রয়েছে। প্রত্যেক জেলার ডাটা পৃথকভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা আছে। যেমন চট্টগ্রাম জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইটালি, চেক রিপাবলিক, সৌদিআরব ও তাইওয়ান।
নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান।

কুমিল্লা ও চাঁদপুরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, ভারত ও জাপান; ব্রাক্ষনবাড়ীয়াতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদিআরব ও ভারত।

কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানে যুক্তরাষ্ট্র, সিয়েরা লিওন, জার্মানি, ইটালি, তাইওয়ান ও চেক রিপাবলিক; এবং খাগড়াছড়িতে অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও তাইওয়ান এর নমুনার সাথে সাদৃশ্য বেশী লক্ষ্য করা গেছে।

গবেষকরা বলেছেন, তাঁদের উন্মোচনকৃত জিনের বিন্যাস চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলায় ভাইরাসের প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল, বৈচিত্রতা ও মিউটেশন এর মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারনা দিবে যেটি ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এসএএস/এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর