নিজস্ব প্রতিনিধি : উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের হাজারীরচর গ্রামের বিজয় চাঁদ বড়ুয়া ও কমলিকা বড়ুয়ার ঘর আলো করে জন্ম নেয়া ডলি বড়ুয়া।
গত ৯ ডিসেম্বর বুধবার সফল জননী হিসেবে ডলি বড়ুয়াকে সম্মাননা দিয়েছে বোয়ালখালী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
১৯৫৪ সালেই জন্মগ্রহণ করা সফল এ জননী সামাজিক নানান প্রতিকুলতাকে কাটিয়ে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর একই গ্রামের কৃতি সংন্তান তৎকালীন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এনাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কুসুমবিন্দু বড়ুয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৭২ সালে।
বিবাহের পর একে একে জন্ম নেন সাতটি সন্তান। তবে এরমধ্যে খুব অল্প বয়সেই তিনি দুটি সন্তানকে হারিয়েছেন।
জন্মের আড়াই বছরের মাথায় এক অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় মারা যান তার প্রথম সন্তান মিল্টন বড়ুয়া এবং দেড় বছর বয়সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার তৃতীয় সন্তান ন্যান্সি বড়ুয়া। ২০০৬ সালে হারায় স্বামী ডা. কুসুমবিন্দু বড়ুয়াকেও।
তবে স্বামী ও বুকের নারী ছেঁড়া দুই সন্তানকে হারিয়েও মনোবল হারিয়ে ফেলেনি এই মা। যার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে সীমাহীন সংগ্রামের গা শিউরে ওঠা গল্প।
সকল বাধার দেয়াল পেরিয়ে তিনি আজ একজন সফল মা। দু সন্তান ও স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে উঠেও বাকি ৫ সন্তান (তিন মেয়ে ও দুই ছেলে)রা কর্মজীবনে স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ডেজী বড়ুয়া এ সফল জননীর ২য় সন্তান। চতুর্থ সন্তান ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিধান বড়ুয়া।
পঞ্চম সন্তান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. ধীমান বড়ুয়া, ষষ্ঠ সন্তান একাউন্টিংয়ে স্নাতকোত্তর সুচরিতা বড়ুয়া ও সপ্তম সন্তান ডেন্টাল সার্জন ডা. অয়ন্তা বড়ুয়া নিজ নিজ ক্ষেত্রে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।
উপজেলা পর্যায়ে সফল জননী হিসেবে তিনি আজ সম্মানিত। তাঁর এ সম্মননায় খুশি পরিবারের সকল সদস্যরাও।
মা সম্পর্কে ডলি বড়ুয়ার চতুর্থ সন্তান ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিধান বড়ুয়া বলেন, ‘আমার মা আমার ভালোবাসা। তিনি সফল।
দুচোখ ভরা স্বপ্ন তিনি সত্যি করেছেন। সন্তানদের সুশিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ করেছেন। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে সেই মায়েদের আজ আনন্দ করার দিন। মর্যাদা লাভের দিন।’
সফল জননীর ২য় সন্তান ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ডেজী বড়ুয়া বলেন, ‘আমার মমতাময়ী মা আমাদের মানুষ করার জন্য জীবনে অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
আমরা যাতে স্বীয়কর্মে প্রতিষ্ঠালাভ করতে পারি তার জন্য দিয়েছেন প্রেরণা। তিনি উপজেলা পর্যায়ে সফল জননী হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পাওয়ায় খুব-খুব আনন্দ হচ্ছে।’
সফল জননী ডলি বড়ুয়া বলেন, ‘সন্তানদের মানুষ করার চেষ্ঠা করেছি। তাদের সফলতার কথা শুনে মনে হয় নিজের স্বপ্নই বাস্তবায়িত হচ্ছে। তারা যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে থাকে এটাই একমাত্র কামনা। সন্তানদের কাছে একটাই প্রত্যাশা, তারা যেন মানব কল্যাণে কাজ করে ও মানুষের পাশে থাকে।’
সন্তানদের জন্য আর্শীবাদ চেয়ে তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে সফল জননী হিসেবে সম্মানিত হওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’
চখ/আর এস