chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

৮৬ বিশ্বকাপে ৫৩ বার ফাউলের শিকার হয়েছিলেন ম্যারাডোনা

ডেস্ক নিউজ: গত সপ্তাহে মারা গেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। কাঁদিয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্তকে। চোখের জলে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন নিজ দেশের অগণিত ফুটবলপ্রেমী। এমনকি ভক্তদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল দেশটির নিরাপত্তারক্ষীদের।

সাপে-নেউলে যাদের সাথে সম্পর্ক সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের দর্শকরাও চোখ ভিজিয়েছেন কিংবদন্তির বিদায়ে। অনেক ব্রাজিলিয়ান স্বীকার করেছেন, তারা ফুটবলটা উপভোগ করেন ম্যারাডোনার জন্যই।

ফুটবল থেকে শুরু করে অন্যান্য অঙ্গনের তারকারাও ম্যারাডোনার এই আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা।

যার মৃত্যুতে আর্জেন্টিনাসহ পুরো বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সে ম্যারডোনা কীভাবে ম্যারডোনা হলেন? চলুন জেনে আসা যাক।

১৯৬৯ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনায় জন্ম হয়েছিলো ম্যারাডোনার। তবে তার বেড়ে উঠা ভিয়া ফিওরিতোতে।

মাত্র ১০ বছর বয়সেই স্থানীয় ক্লাব এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলা শুরু করেন দিয়াগো। তারপর খেলা শুরু করেন বুয়েন্স আয়ার্সের জুনিয়র দল ‘লস সেবোলিটিয়াস’ এর হয়ে। এই দলের হয়ে টানা ১৩৬ ম্যাচ খেলেন। আর নিজের ফুটবল প্রতিভার জন্য মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘বল-বয়’ খেতাব পান।

১৯৭৬ সালে পেশাদার ফুটবলে নাম লেখান। আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে যোগ দেন তিনি। এই ক্লাবে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত খেলেন। আর ১৬৭ ম্যাচে খেলে গোল করেন ১১৫টি।

১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। হাঙ্গেরির বিপক্ষে নিজ দেশের হয়ে মাঠে নামেন তিনি।

 

১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠেই বিশ্বকাপ আসর। কিন্তু সুযোগ পাননি ম্যারাডোনা। তবে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে না পারলেও ১৯৭৯ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম গোল করেন ম্যারাডোনা। তারপরই পুরো বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলা প্রদর্শন করে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

 

১৯৮১ সালে ক্লাব পরিবর্তন করে ‘বোকা জুনিয়র্স’এ যোগ দেন। আর ১৯৮২ সালে প্রথম লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। আর সময় গুনতে গুনতে চলে আসে বিশ্ব ফুটবলের বড় আসর বিশ্বকাপ। কিন্তু সেবার দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে ব্রাজিলের কাছে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার।

 

এরপর ১৯৮২ সালে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন ফুটবল কিংবদন্তি। দুই সিজনে ৫৮ ম্যাচে ৩৮ গোল করেন বার্সার হয়ে। ১৯৮৩ সালে বার্সার হয়ে কোপা দেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ ছিলো বার্সার হয়ে তার অর্জন।

 

কিন্তু ফর্মের তুঙ্গে থাকার পরও সেসময়ের বার্সার প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ লুইস নুনেজের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে বার্সা ছেড়ে দেন ম্যারাডোনা।

 

১৯৮৪ সালে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন। তারপরই তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। এখন পর্যন্ত নাপোলির ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সময় ছিলো এটি। তার দারুণ ফর্মের কারণে নাপোলি ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে সিরি এ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়। আর ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ম্যারাডোনা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

 

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কত্ব পান। আর এই বিশ্বকাপেই তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার বিখ্যাত গোল ‘দ্য হ্যান্ড অব গড’ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যারাডোনার অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আর ২০০২ সালে ফিফা অনলাইনে ভোটের আয়োজন করলে এই গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়।

 

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের সময় ইনজুরির কারণে মাঠে অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন ম্যারাডোনা। ফলে টানা দুই বিশ্বকাপ জেতা হয়নি আর্জেন্টিনার।

 

পরবর্তীতে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা পান। ১৯৯২ সালে ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়ে দেন। পরে, স্পেনীয় ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে লিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেন।

 

আর ১৯৯৪ সালে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ম্যারাডোনা।

 

ম্যারাডোনার জানা-অজানা কিছু তথ্য-

 

জাতীয় দলে আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি, করেছেন ৩৪ গোল। দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ম্যারাডোনা। বিশ্বকাপে কোনো দলের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ম্যারাডোনার।

 

১৬টি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ম্যারাডোনার। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে মোট ২১টি ম্যাচ খেলেছেন। জাপানে হওয়া ১৯৭৯ সালের যুব বিশ্বকাপে বাজিমাত করা আর্জেন্টিনা দলে ছিলেন ম্যারাডোনা।

 

বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে ফাউলের শিকার হওয়ার রেকর্ড ম্যারাডোনার। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে মোট ৫৩ বার তাকে ফাউল করা হয়েছিল তাকে।

 

ম্যারাডোনার অধিনায়কত্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয় করে আর্জেন্টিনা। ওই আসরে ম্যারাডোনা তার অসামান্য পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে জেতেন গোল্ডেন বল।

 

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে হাত দিয়ে গোল করেন ম্যারাডোনা। ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে যে গোলটি এক নামে পরিচিতি। ওই গোল নিয়ে পরে তিনি বলেছিলেন, “ওই গোলটি কিছুটা ঈশ্বরের হাত এবং কিছুটা ম্যারাডোনার মাথা থেকে হয়েছিল।”

 

২০০৮ সালের অক্টোবরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন।

 

ম্যারাডোনার বাহুতে আছে চে গেভারা এবং বাঁ পায়ে আছে ফিদেল কাস্ত্রোর ট্যাটু।

 

আর্জেন্টিনোর জুনিয়র্স নিজেদের স্টেডিয়ামের নাম দিয়েছে ইস্তাদিও দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা।

 

হ্যান্ড অব গড-গোলের চার মিনিট পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো সেই দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার-ফাইনালে দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডারদের ছিটকে দিয়ে পিটার শিলটনকে পরাস্ত করে স্কোরলাইন ২-০ করেছিলেন। ফিফা এ গোলটিকেই ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

নচ/চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর