chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চিটাগাং চেম্বার, জেটরো এবং জেবিসিসিআই’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ডেস্ক নিউজ : দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (সিসিসিআই), ঢাকাস্থ জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো) এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (জেবিসিসিআই)-কে সাথে নিয়ে “সেলিব্রেটিং ফিফটি ইয়ারস অব জাপান-বাংলাদেশ ইকনোমিক ফ্রেন্ডশীপঃ প্ল্যানিং ফর নেক্সট টেন ইয়ারস (২০২১-২০৩০) অব প্রাইভেট সেক্টর কোঅপারেশন” শীর্ষক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং জেটরো’র ঢাকাস্থ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ও জেবিসিসিআই সভাপতি ইউজি অ্যান্ডো (Mr. Yuji Ando) এই সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি H.E. Mr. Ito Naoki), জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে জাইকা’র চীফ রিপ্রেজেন্টিটিভ হায়াকাওয়া ইউহো (Mr. HAYAKAWA Yuho), এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং জেবিসিসিআই সহ-সভাপতি শরিফুল আলম অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন।

এ সময় চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এস. এম. আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, মোঃ শাহরিয়ার জাহান, মোঃ এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, সালমান হাবীব, সাকিফ আহমেদ সালাম ও শাহজাদা মোঃ ফৌজুল আলেফ খান, চট্টগ্রামস্থ জাপানী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন চেম্বার পরিচালক এ. কে. এম. আক্তার হোসেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চেম্বার পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি জাপানকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম ও দীর্ঘদিনের বন্ধু রাষ্ট্র উল্লেখ করে বলেন-উভয় দেশের মধ্যে আগামী দিনের দ্বিপাক্ষিক অধিকতর অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে এই সমঝোতা স্মারক সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে একটি সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।

প্রাইভেট সেক্টর দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। বেসরকারি খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ১০ বছরের একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যাবশ্যক।

তিনি বলেন-আগামী ২০২১-২০২২ সালে বে অব বেঙ্গল গ্রোথ সামিট আয়োজন বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ এশিয়ার প্রধান বিনিয়োগ কেন্দ্রের পরিণত করবে। বাণিজ্য মন্ত্রী এই উদ্যোগকে স্বাগতঃ জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন-দু’দেশের বন্ধুত্বের সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে ঐতিহাসিক এই সমঝোতা স্মারক সম্পর্কোন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর দু’দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন বা ফ্ল্যাগশীপ প্রজেক্ট।

বাংলাদেশের মানুষ এখন জাপানের কাছ থেকে পণ্যের কোয়ালিটি সম্পর্কে জানতে অনেক বেশী আগ্রহী যা ইতিবাচক। বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ এর আওতায় ঢাকা থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে জাপান সরাসরি জড়িত।

তিনি এই সমঝোতা সমর্থনে জাপান সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আগামীতে জাপানে বাংলাদেশী পণ্যের এবং ব্যবসার রোড-শো আয়োজনের প্রস্তাব করেন।

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন-এই চুক্তি ব্যবসা ও বিনিয়োগে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য অধিকতর বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জাপানী কোম্পানীগুলো এদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানকে বাংলাদেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং যমুনা ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।

জাপান থেকে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত রেগুলেটরী প্রসেস, প্রতিযোগী সক্ষমতা ও উন্মুক্ত অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় শিখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন-কার্যকর সহযোগিতার ক্ষেত্রে চিটাগাং চেম্বার নতুন দিনের সূচনা করবে।

তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে জাপান কর্তৃক দক্ষ জনশক্তি আমদানির উদাহরণ তুলে ধরেন এবং প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন-বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সংস্কৃতিগত সাযুজ্য, প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তিনি এই স্মারক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নির্দেশক বলে অভিহিত করেন। জাপান বাংলাদেশের বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার। জাপানীদের ন্যায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার সততা এবং স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে তিনি জানান।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে জাপানের অবদান অপরিসীম। ২০১০ সালে চিটাগাং চেম্বার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টোকিওতে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সেন্টার স্থাপন করে। যার ফলে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে জাপানী বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখে বেসরকারি খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে আগামী ১০ বছরের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে জেটরো ও জেবিসিসিআই’র সাথে চিটাগাং চেম্বার এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করছে।

আমরা আশা করি এই সমঝোতার আওতায় আগামী দিনগুলোতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কাংখিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে যা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

জেটরো’র ঢাকাস্থ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ও জেবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ইউজি অ্যান্ডো শুধু স্বাধীনতা উত্তর নয়, স্বাধীনতার পূর্বেও চট্টগ্রামে জাপানী বিনিয়োগ এসেছিল। কাজেই চট্টগ্রাম সব সময় জাপানী বিনিয়োগকারীদের পছন্দের স্থান।

বিশ্ব মহামারীর পরও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এখনই উপযুক্ত সময়। তিনি আশা করেন এই সমঝোতার মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন হবে।

জেটরো মূলত ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ পরিবেশ পর্যালোচনা করে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা চিহ্নিতকরণে কাজ করে থাকে। তিনি চিটাগাং চেম্বারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে মিরসরাই ইকনোমিক জোনে জাপানী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন।

জাইকা’র চীফ রিপ্রেজেন্টিটিভ হায়াকাওয়া ইউহো বলেন-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, ওয়াটার সাপ্লাই, বিমান বন্দর সম্প্রসারণ, মাতারবাড়ী প্রকল্পসহ বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ’র আওতায় জাইকা বাংলাদেশে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছে। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ’র লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন-২০০৮ সাল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০০% এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪০%। জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের মুনাফা সর্বোচ্চ। তাই বাংলাদেশ বিনিয়োগের আদর্শ স্থান।

তিনি এ সমঝোতা স্মারকের সফলতা কামনা করেন এবং এটি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণ ও লজিস্টিক সাপোর্টে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন। শেখ ফজলে ফাহিম জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এফবিসিসিআই কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচী, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, পলিসি রিসার্চ সেন্টার, স্কিল ল্যাব, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ইত্যাদি সম্পর্কে জানান।

জেবিসিসিআই সহ-সভাপতি শরিফুল আলম বলেন-দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন ডলার যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশসমূহের চেয়ে অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর