chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বোয়ালখালীতে ঋণের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন ঋণ গ্রহীতারা, দুর্বিষহ জীবনযাপন

নিজস্ব প্রতিনিধি : চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার ঋণ গ্রহীতারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঋণের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকেই।

সম্প্রতি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে নতুন করে পুনরায় ঋণ পাওয়ার আশায় সুদী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েও অনেকেই তাদের পুরনো ঋণ পরিশোধ করছেন।

তবে পরিশোধের দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই কাঙ্কিত ঋণের কোন দেখাই মিলছে না। ফলে চড়া সুদে নেওয়ার টাকার পরিমাণ সুদে আসলে ডাবল হয়ে যাচ্ছে অল্পদিনেই।

জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি আদায়ের বিষয়ে কয়েক দফায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি ঘোষণা দিলে এনজিও সংস্থাগুলো কিস্তি আদায়ে কিছুটা সীমিত হয়ে আসে। তবে অভিযোগ ছিলো ঋণ গ্রহীতাদের কিস্তি আদায়ে চাপে রেখেছিলেন তারা।

এই সময় পার হওয়ার পর সেই সব কিস্তিকে বকেয়া হিসেবে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নতুন করে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আগের ঋণের সুদসহ সমস্ত টাকা নিয়ে নিচ্ছেন তারা।

এতে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করলেও নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না এনজিও সংস্থাগুলো। ফলে গ্রাহকরা পড়ছেন বেশ বেকায়দায়।

উপজেলার শাকপুরার প্রিয়া চৌধুরী জানান, ‘হীড বাংলাদেশ’ নামক একটি সংস্থার বোয়ালখালী শাখার সদস্য তিনি। গত চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। যা আগামী ডিসেম্বর মাসে কিস্তির মাধ্যমে শেষ হওয়া কথা ছিলো।

গত মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বেশ কিছু কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি। এ অবস্থায় ওই সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক ৪ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন ‘এক সাথে সব কিস্তি পরিশোধ করে দেন, একমাসের মধ্যে আপনার ঋণ পেয়ে যাবেন।’

এ আশ্বাসে তিনি এলাকার একজনের কাছ থেকে সুদে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করে দেন। এরপর ওই সংস্থা থেকে জানানো হয় নতুন করে ঋণ দেওয়া সুযোগ এখন নেই। একই কথা জানিয়েছেন ওই সংস্থার সদস্য লাকী দাশগুপ্তা, রেখা আর্চায্য, চিনু দাশসহ অনেকেই।

এতে আর্থিক চাপে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রামের এনজিও সংস্থার সাথে জড়িত মানুষগুলো। গ্রামের বেশির ভাগ খেটে খাওয়া মানুষ কোনো না ভাবে এইসব এনজিও সংস্থা থেকে ১২ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ নেন।

তারা এইসব সংস্থায় সাধারণ সঞ্চয় ও মেয়াদী সঞ্চয়ী হিসাব খুলে তার বিপরীতে সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের শর্তে এসব ঋণ নেন বলে জানা গেছে।

বোয়ালখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম মোদ্দাচ্ছের বলেন, ‘এনজিও সংস্থাগুলো কিস্তি আদায়ে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তবে এটি এক ধরণের কৌশল হলেও তা প্রতারণার সামিল।

চলমান ঋণ পরিশোধে যে গ্রাহক অপারগ তাকে আরো ঋণ দেওয়ার কথা বলে বিপদে ফেলার প্রশ্নই ওঠে না। তারা কি জানে না, তাদের গ্রাহকের আয়ের উৎস কি? এটি অমানবিক।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে বেশ কয়েকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিস্তি আদায়ে সময় দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছি।

এ ব্যাপারে নতুন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশনা দেননি। তারপরও বলবো এ দুঃসময়ে সংস্থাগুলো যেন তাদের গ্রাহকদের প্রতি মানবিক আচরণ করেন।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর