chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে সক্রিয় কিশোর গ্যাং নিষ্ক্রিয় পুলিশ

মেহেদী হাসান কামরুল : নগরীতে দিন দিন শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তুচ্ছ ঘটনা থেকে মারধর, মারধর থেকে এমনকি হত্যাকান্ড পর্যন্ত ঘটছে। যেসব শিশু-কিশোরের সুন্দর শৈশব ও কৈশোর নেই, যারা পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসা এমনকি জীবনযাপনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা সহজেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় পেশাদার অপরাধীরা কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করে নিজেদের দলভারী করে।

এছাড়া কতিপয় অসাধু রাজনীতিবীদ নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের বলয় তৈরি করে। বিশেষ করে নির্বাচনে ভোটের মাঠে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের ‘কদর’বেড়ে যায় বহুলাংশে।

চট্টগ্রামে সক্রিয় কিশোর গ্যাং নিষ্ক্রিয় পুলিশ

অনুসন্ধান বলছে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী নগরের কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র আদনান ইসাফ খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের প্রকাশ্য আধিপত্য বেরিয়ে আসে। ওই ঘটনায় তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বর্তমান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ১৬টি থানায় কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করার নির্দেশ দেন। পরে প্রতিটি জোনের সহকারী কমিশনারবৃন্দ ১৬ থানাসহ আশে পাশের প্রায় ৩ শতাধিক স্পটে ৫ শতাধিক সদস্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করে। তবে থানার ওসিদের মধ্যে ওই তালিকা ধরে কাজ করার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে প্রায় শতাধিক কিশোর গ্যং সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্তত ১৫ জন লিডারকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

চট্টগ্রামে সক্রিয় কিশোর গ্যাং নিষ্ক্রিয় পুলিশ

এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছ থেকে ছুরি, আগ্নেয়াস্ত্র, রড, সুতা, মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এদের অধিকাংশ নগরীর ফ্লাইওভারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সুতা টাঙিয়ে ছিনতাই করতো।

বর্তমানে নগরীতে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং অধ্যুষিত এলাকা গুলোর মধ্যে অন্যতম মোগলটুলী, ডেবারপাড়, বাংলাবাজার, মাদার বাড়ী, যুগিচাঁদ মসজিদ, আগ্রাবাদ, সিআরবি সাত রাস্তার মোড়, কাজীর দেউরি, রেলওয়ে স্টেশন, ধনিয়ালাপাড়া, শেরশাহ, বায়েজিদ, অক্সিজেন, জামাল খান, বহদ্দারহাট, পাথরঘাটা, ষোলশহর রেল স্টেশন, চকবাজার তৈলপট্টি, শপিং কমপ্লেক্স, অভয়মিত্র ঘাট, বিজয়নগর, অনন্যা আবাসিক, নেভাল রোড, রঙ্গিপাড়া, ঈদগাঁও, পাহাড়িকা আবাসিক, কল্পলোক আবাসিক, আকবরশাহ, মুহুড়ী পাড়া, কর্ণেল হাট। এর মধ্যে ষোলশহর রেলস্টেশনে রয়েছে, ‘নাইস বয়েস’, শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে ‘এফ এক্স বয়েস’, এছাড়া ডিস্কো বয়েস, ডিজে তুফান, ডিপিএফ, অস্থির পোলাপাইন, সেভেন স্টারসহ বিভিন্ন উদ্ভট নামধারী গ্রুপ।

কিশোর গ্যাংয়ের এতো অপকর্ম দেখার পরও পুলিশ যেন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা নাম সর্বস্ব অভিযান চালানো হলেও ধরাছোঁয়ার বা্ইরে থাকে মূলহোতারা। কিশোর গ্যাংয়ে লাগাম টানার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা জানান খোদ পুলিশের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, অনেক সময় দেখা যায় কিশোর গ্যাংয়ের লিডার কিংবা সদস্য ধরে আনা হলে নেতারা ফোন করে ছেড়ে দেয়ার তদবীর করেন।

কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অনেকটাই তৎপর র‌্যাব। ইতোপূর্বে চকবাজারের কিশোর গ্যাং নেতা নুরুল মোস্তফা টিনুকে গ্রেফতারের পাশাপাশি আজ চাঁন্দগাওয়ে আরেক লিডার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী হামকা রাজুকে বিদেশী পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।আমি নিজেই কাজ করতে গিয়ে কিশোর গ্যাং কালচারের সন্ধান পেয়েছি। এটা পুলিশের জন্য বরাবরের মতই চ্যালেঞ্জ। তবে কিশোর গ্যাং নির্মূল করতে পুলিশ সচেষ্ট হয়ে কাজ করছে।

দায়বদ্ধতা শুধু পুলিশের নয় জানিয়ে কমিশনার আরো বলেন, আমাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়েছে। তারা এতোই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে আদরের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখারও সময় পাচ্ছেন না। পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।অনেক অভিভাবকদের দেখি কোন প্রয়োজন ছাড়া সন্তানদের হাতে মোটরসাইকেল তুলে দেন। সেই মোটরসাইকেল পুলিশ আটক করলে তদবীর করতে আসেন। সন্তানদের মোটরসাইকেল দেয়ার কারণ জানতে চাইলে অভিভাবকরা বলেন ‘সন্তান আবদার করেছে, তাই দিয়েছি’। কিন্ত সন্তানদের এই অনৈতিক আবদার রক্ষা করতে গিয়ে প্রিয় সন্তানকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছেন তা একবারও ভাবছেন না। এসব বাইক ব্যবহার করেই সন্তানরা গ্যাং কালচারে ঝুঁকে যাচ্ছে।

এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর