chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ইংল্যান্ডের মুদ্রায় বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ছবি

নিরহংকারী বাঙালী বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা কম-বেশি সবাই জানি। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন বেতার তরঙ্গ, কিন্তু পেটেন্টের প্রতি অনুরাগী ছিলেন না।

তাইতো টেলিগ্রাফের আবিষ্কারক হিসেবে লিপিবদ্ধ গু’লিয়েলমো মা’র্কোনির নাম। তবে সম্মানটা ঠিকই পাচ্ছেন বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী।

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুই বিশ্ববাসীকে প্রথমবারের মত জানিয়েছিলেন উদ্ভিদের মধ্যে আছে প্রা’ণশক্তি। এটি প্রমাণের জন্যে তিনি ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা উদ্ভিদদেহের সামান্য সাড়াকে লাখোগুণ বৃদ্ধি করে প্রদর্শণ করে। এবারে সেই জগদীশ্চন্দ্র বসুর ছবিযুক্ত মুদ্রা প্রচলিত হয়েছে ইংল্যান্ডে।

জানা গেছে, ইংল্যান্ডের বাজারে ২০২০ সালে এসেছে নতুন ৫০ পাউন্ডের নোট। নোটে ছাপানো হয়েছে বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানীর মুখ ৷

এমনই সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এর আগে নোটে ছাপানোর জন্য একশ’ জন বিজ্ঞানীর নাম উঠে আসে, প্রাথমিকভাবে এই নামগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু।

নিজেদের ওয়েবসাইটে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের কাছে ১ লাখ ৭৫ হাজার মনোনয়ন জমা পড়েছে। এরমধ্য থেকে বেছে নেয়া হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার নাম। যার মধ্যেই রয়েছেন জগদীশ চন্দ্র বসু। আধুনিক বিজ্ঞানের পথিকৃত তিনি।

তার ছাড়া যে যোগাযোগ রক্ষা করা যায় তা প্রথম আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুই দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আবিস্কার করেছিলেন আধুনিক বেতার তরঙ্গ। যা ছাড়া ওয়্যারলেস কমিউনেকশন সম্ভব ছিল না।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু পলিম্যাথ, বায়োলজিস্ট, বায়োফিজিস্ট, বোটানিস্ট ও অর্কিওলজিস্টও ছিলেন। এছাড়া কৃষি বিজ্ঞানেও তার অনেক অবদান রয়েছে।

তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন আমলে বাংলা প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) মুন্সীগঞ্জে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম।

পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজের একজন বিশিষ্ট সদস্য। চাকরি করতেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের এবং একই সঙ্গে ছিলেন ফরিদপুর, ভারতের বর্ধমানসহ কয়েকটি এলাকার সহকারী কমিশনার হিসেবে।

ব্রিটিশ আমলে জন্ম নিয়েও জগদীশ চন্দ্রের শিক্ষা জীবন শুরু হয় বাংলা ভাষায়। সেই সময়ে অ’ভিভাবকেরা নিজের সন্তানকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছিলেন সবসময় তৎপর।

জগদীশ চন্দ্রের এই পারিপার্শ্বের থেকে উল্টো স্রোতে গা ভাসানোতে অর্থাৎ বাংলা ভাষায় শিক্ষাজীবন শুরু করতে তার পিতার ভূমিকাই ছিলো বেশি।

পিতা ভগবান চন্দ্র বসু বিশ্বা’স করতেন যে, শিক্ষাগ্রহণের জন্য সর্বপ্রথম চাই নিজের মাতৃভাষাকে ভালো’ভাবে রপ্ত করা এবং দেশপ্রে’মকে অন্তরে ধারণ করা। তারপর না হয় বিদেশী ভাষা শেখা যাবে। সেই যুগে এমন চিন্তা-ভাবনার কথা কেবল কোনো স্বদেশপ্রে’মিকের মুখেই মানাতো।

জগদীশ চন্দ্র তার নিজের করা গবেষণা বা আবিষ্কারের জন্য জীবদ্দশায় কোনো পেটেন্ট গ্রহণ করেননি, কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞানী সমাজ রেডিও তরঙ্গের ক্ষেত্রে তার অবদান স্বীকার করেন অম্লানবদনে। তাকে আখ্যা দেয়া হয় বেতার যোগাযোগের জনক হিসেবে।

মিলিমিটার তরঙ্গ আবিষ্কার করে তিনি বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন অগ্রপথিক হিসেবে আজ গণ্য হন। তার আবিষ্কৃত অনেক যন্ত্র আজও ব্যবহার হয়ে আসছে যাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার এন্টেনা, পোলারাইজার এবং ওয়েভগাইড উল্লেখযোগ্য। যদিও এখন এদের আধুনিকায়ন করা হয়েছে।