মিনিস্টার গ্রুপের অবৈধ বিজ্ঞাপনে সয়লাব নগরী
দায় চাপানো হচ্ছে পুলিশ বিভাগের ওপর
মেহেদী হাসান কামরুলঃ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার গ্রুপের অননুমোদিত বিজ্ঞাপনে সয়লাব নগরীর সড়ক, অলিগলি। স্টিল প্লেটের তৈরি এসব বিজ্ঞাপনে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নাম ব্যবহার করে যানবাহন ও পথচারীদের জন্য নানা ধরনের সতর্কতামূলক বাণী প্রচার করা হয়েছে। সড়কে যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করেই মিনিস্টার গ্রুপ তাদের পণ্যের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুমোদনহীন বিজ্ঞাপনের কারণে একদিকে যেমন নগরীর সৌন্দর্যহানি হচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে পুলিশ বিভাগের নাম থাকায় এসব অবৈধ বিজ্ঞাপন উচ্ছেদে খুব একটা আগ্রহ নেই করপোরেশনের।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) নগরের ব্যস্ত সড়ক আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, বারেক বিল্ডিং মোড়, দেওয়ান হাট, বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড মোড়, কাটগড়, জিইসির মোড়, দুই নাম্বার গেইট, একে খান, অলংকার, টাইগার পাস, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেটসহ প্রতিটি ব্যস্ত এলাকায় বিজ্ঞাপন চিত্র দেখা যায়। ফুটপাত বা সড়ক বিভাজকের ওপর নির্ধারিত দূরত্বে এমন বিজ্ঞাপন দৃষ্টিকটু বলে অভিযোগ করেছেন নগরবাসী।
তারা বলেন, বিজ্ঞাপন প্রচারে কৌশলী পন্থা অবলম্বন করছে মিনিস্টার গ্রুপ। এক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে। এসব বিজ্ঞাপনে যানবাহন ও পথচারীদের জন্য নানা সতর্কতামূলক বাণী প্রচারের পাশাপাশি মিনিস্টার গ্রুপের এলইডি টিভি ফ্রিজসহ নানা পণ্যের কৌশলী প্রচারণা করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে দায়িত্ব গ্রহনের পর সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন নগরীতে সকল অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, বিজ্ঞাপন চিত্র প্রদর্শন বন্ধ ঘোষণা করেন। সেই থেকে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার প্রত্যয়ে সড়কে বিলবোর্ডসহ সকল প্রকার বিজ্ঞাপন প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নগরীর সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় বিধিমালা মেনে কিছু বিজ্ঞাপন প্রচারণায় অনুমোদন দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হলে করপোরেশনকে নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করতে হয়।
সড়কে মিনিস্টার গ্রুপের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম চট্টলার খবরকে বলেন, মিনিস্টার গ্রুপ নগরীতে যেসব বিজ্ঞাপন প্রচার করছে তার কোনটার অনুমোদন নেই। এগুলো সবগুলোই অবৈধ। তাছাড়া এসব বিজ্ঞাপন নগরীর সৌর্ন্দয্য বর্ধন প্রকল্পের আওতাভুক্তও নয়। অনুমোদনহীন বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে করপোরেশন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।
মিনিস্টার গ্রুপের এসব অবৈধ বিজ্ঞাপন উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ বিভাগের সাথে চসিকের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে উল্লেখ করে মফিদুল আলম বলেন, যেহেতু এসব অবৈধ বিজ্ঞাপনে পুলিশ বিভাগের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাই তারাই (পুলিশ বিভাগ) স্বউদ্যোগী হয়ে বিজ্ঞাপন থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের জন্য মিনিস্টার গ্রুপকে অনুরোধ জানাতে পারে।
এ প্রসঙ্গে মিনিস্টার গ্রুপের নিয়োজিত বিজ্ঞাপন সংস্থা ‘স্বর্ণা এড সাইন’ এর কর্ণধার আবুল কাশেম চট্টলার খবরকে বলেন, আমরা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অনুরোধে যানবাহন ও পথচারীদের জন্য সতর্কতামূলক কিছু বিজ্ঞাপন তৈরি করে দিয়েছি। এর বিনিময়ে মিনিস্টার গ্রুপের উৎপাদিত পণ্যের প্রচারণাও সেসব বিজ্ঞাপনে করা হয়েছে। তবে এজন্য পুলিশ বিভাগ বা সিটি করপোরেশনকে আমরা কোনো টাকা দেইনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর চট্টলার খবরকে বলেন, মিনিস্টার গ্রুপের বিজ্ঞাপনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেবো।
চখ