chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

নৌ যান ধর্মঘট: বহির্নোঙরে খাদ্যপণ্যসহ ১০ লাখ টন পণ্য জাহাজে আটকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট। যার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে ৫৪টি বিদেশি জাহাজে ১০ লাখ টন পণ্য আটকা পড়েছে। এসব জাহাজে গম, ভুট্টা ও ছোলা আছে সাড়ে ৪ লাখ টন; পশুখাদ্য আছে দেড় লাখ টন এবং বাকিটা পাথর, কয়লা এবং সিমেন্ট তৈরীর কাঁচামাল রয়েছে। জাহাজ থেকে নামিয়ে এসব পণ্য বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর, কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট এবং বহির্নোঙর থেকে ছোট জাহাজে সরাসরি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সরবরাহ নেয়ার কথা ছিল।

গত সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে ধর্মঘটের কারণে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে (লাইটারিং) পণ্য স্থানান্তর কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকায় বহির্নোঙরে অচলাবস্থা চলছে।

তবে বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহি বড় কন্টেইনার এবং খোলা দুই ধরনের জাহাজ আসা-যাওয়া করেছে সঠিক সময়ে; একইসাথে বন্দরের ভিতর ১৮টি জেটিতে পণ্য উঠানামা পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। নৌ যান শ্রমিক ধর্মঘটের কোন নেতিবাচক প্রভাব সেখানে পড়েনি। তবে ধর্মঘট আজ বুধবারও অব্যাহত থাকলে বৃহস্পতিবার থেকে এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ চলাচল না করলেও বন্দরের মূল জেটি জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি, রিভারমুরিং, ডলফিন অয়েল জেটি ও স্পেশাল বার্থে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এবং বন্দর থেকে লরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে পণ্য ও কনটেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে শীপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম শামসুজ্জামান রাসেল  বলেন, সোমবার রাত ১২টা থেকে বহির্নোঙরে পণ্য নামানোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে করে ৫৪টি বিদেশি জাহাজে ১০ লাখ টন পণ্য আটকা পড়েছে। সাগরে অলস বসে থাকার জন্য একদিনে ১০ হাজার মার্কিন ডলার বাড়তি দিতে হবে জাহাজ মালিকদের; এই টাকা চলে যাবে বিদেশে। দেশের আমদানিকারকরা এই বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে; শেষপর্যন্ত ভোক্তাকেই এর দায় বহন করতে হবে।

তিনি বলেন, বুধবার ধর্মঘট প্রত্যাহার হলে আমরা বাড়তি কাজ করে ধকল সামাল দিতে পারবো কিন্তু বুধবারও অব্যাহত থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করবে।

পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে তিন ধরনের জাহাজ আসে। এরমধ্যে কন্টেইনার জাহাজ ও ট্যাংকার জাহাজ সরাসরি জেটিতে চলে আসে; সেখানে নৌ যান শ্রমিকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আর খোলা বা বাল্ক জাহাজ আসে বড় আকারের সেগুলো বন্দর জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারে না। সেজন্য কিছু পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে ওজন হাল্কা করে জেটিতে ভিড়তে হয়। এই জাহাজে নৌ যান শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা থাকায় এর প্রভাব পড়েছে ধর্মঘটে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ধর্মঘট কোন সমাধান নয়। কোভিড-১৯ নিয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা এই সময়ে এমন ধর্মঘট পরিস্থিতি উত্তরনের গতিকে থমকে দিবে। আমরা চাই ধর্মঘট শ্রমিক এবং জাহাজ মালিক পক্ষের সাথে বৈঠকে বসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত এর সমাধান করবে। এক মুহুর্ত অপচয় করা যাবে না। সামান্য সময়ক্ষেপ করলে বড় মাশুল আমাদেরকেই গুনতে হবে।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর উপকূল থেকে কোন ছোট জাহাজ বহির্নোঙরে পণ্য আনার জন্য যেতে পারেনি; একইসাথে বহির্নোঙর থেকে কোন ছোট জাহাজ পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দেয়নি।

লাইটার জাহাজ বুকিং প্রদানকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ খান বলেন, প্রতিদিন ৩০টির মতো লাইটার জাহাজ পণ্য আনতে বহির্নোঙরে যায়; গতকাল বুকিং থাকলে তারা রওনা দিতে পারেনি। যারা আগের দিন বহির্নোঙরে গিয়েছে তারাও পণ্য বোঝাই করে রওনা দিতে পারেনি।  ফলে সবাই উদ্বেগে আছেন।

নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা; ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযান শ্রমিকদের বেতন প্রদান নিশ্চিত করা; ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ এবং নৌ শ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ ১১ দফা দাবি আদায় ধর্মঘট ডেকেছে নৌ যান শ্রমিক ফেডারেশন।

ধর্মঘটের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা নৌ শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মো. নবী আলম বলেন, ১১ দফা দাবি আদায়ে গত দেড় বছরে আমরা তিনবার ধর্মঘট ডেকেছি। বেশিরভাগ দাবি আদায় করবে জাহাজ মালিক পক্ষ কিন্তু জাহাজের মালিকপক্ষ বারবারই আশ্বাস, দিয়েছে বাস্তবায়ন করেনি। দাবিগুলো নিয়ে সর্বশেষ গত সোমবার বৈঠক করা হলেও কোন সমাধান না আসায় আমরা বাধ্য হয়ে ধর্মঘট শুরু করেছি।

চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় এক হাজার ছয়শ লাইটার জাহাজ চলাচল করে জানিয়ে নবী আলম বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আমাদের প্রায় ৫০ হাজার নৌ যান শ্রমিক এবং সারাদেশে মোট দুই লাখ শ্রমিক আছে।

এসএএস/

এই বিভাগের আরও খবর