chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

তবুও কমছে না পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্তেও কমছে না পেঁয়াজের দাম। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে খুচরায় যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকায় তা তিনগুন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ বোঝাই হয়ে জাহাজ ভিড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরে, তবুও এর বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ছে না খুচরা বাজারে। কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ। আমদানি পর্যায়ে পেঁয়াজের মূল্য কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা বলে দাবি আমদানিকারকদের। তবে খুচরা পর্যায়ে গিয়ে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। মূলত খুচরা বাজারে ৯০ টাকার নিচে পেঁয়াজ মিলছে না।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে পেঁয়াজ বোঝাই জাহাজে সারি রয়েছে গভীর সমুদ্রে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) পর্যন্ত এক হাজার ৬ মেট্রিকটন পেঁয়াজ খালাস করতে ছাড়পত্র দিয়েছে বন্দরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিয়ানমার, পাকিস্তান ও দুবাই থেকে পেঁয়াজের প্রথম চালান এলেও তার প্রভাব পড়েনি পাইকারী ও খুচরা বাজারে। বরং তিনগুন দামে স্থির রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। পাইকারী আড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন বাজার ও খুচরা মুদির দোকানে ঘুরে দেখা গেছে ১০০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না বিক্রেতারা। সিরাজুদ্দৌলা রোডের সাবএরিয়া আঞ্জুমান স্টোরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা করে বিক্রি করছেন দোকানি মো. শহীদ। এছাড়া দেওয়ানজী পুকুড়পাড়ের প্রদীপ স্টোরে ১০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন দোকানী বিধান ধর।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারী আড়তদাররা জানিয়েছেন, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও দুবাই থেকে আমদানী করা পেঁয়াজ আসলেও তা ছিল চাহিদার চেয়ে কম। অবশ্য খাতুনগঞ্জের পাইকাররা বিদেশের পেঁয়াজ না পেলেও দেশি পেঁয়াজ এনে বিক্রি করছেন।

আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকার আড়ত গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। খাতুনগঞ্জের মেসার্স আল আরাফাত ট্রেডার্সের পরিচালক হাজী মো. আলম বলেন, দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে মানভেদে ৮৫ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের পেঁয়াজের পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রক হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের দাম পাইকারী পর্যায়ে চড়া। দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত (প্রতিকেজি) বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়।

তিনি বলেন, চাহিদার চেয়ে কম পেঁয়াজ আসছে আড়তে। আগে যেখানে ১০-১৫ ট্রাক পেঁয়াজ আসতো। সেখানে ৩-৪ ট্রাক আসছে। আবার কোনদিন আসেও না। বাজারে দেশি পেঁয়াজ বেশি। মিয়ানমার ও পাকিস্তানের অল্প পেঁয়াজ আছে। পেঁয়াজের দাম কমতে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। কারণ আগামি সপ্তাহে বিদেশ থেকে এলসি করা পেঁয়াজ আসতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ভারতের বিকল্প বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে পেঁয়াজ বোঝাই জাহাজ আসতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে পাকিস্তান, মিয়ানমার থেকে ৪ জাহাজ পেঁয়াজ এসে পৌঁছেছে বন্দরে। এসব পেঁয়াজের খালাস কার্যক্রম চলছে দ্রুত গতিতে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি পেঁয়াজ বোঝাই জাহাজ বন্দর অভিমুখে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পেঁয়াজ আমদানিকারক বলেছেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। কমিশন ভিত্তিতে আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে গিয়ে তা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ১ হাজার ৬ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র ইস্যু করেছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, গতকাল সোমবার পর্যন্ত আমরা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আসা ১ হাজার ৬ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র ইস্যু করেছি। পাইপলাইনে আরও পেঁয়াজ আছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত এ কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৭ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৩৫১টি অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চীন, মিশর, তুরস্ক, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ভারত ও পাকিস্তান- এ ১২ দেশ থেকে এসব পেঁয়াজ আনছেন তারা।

দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এসব চালান দ্রুত খালাসের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিয়ানমার, পাকিস্তান ও দুবাই থেকে ১১ টি কনটেইনারে করে ৩৭৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসে।

এসএএস/

এই বিভাগের আরও খবর