chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ধর্ষণের মহামারী

প্রতিদিন গড়ে ধর্ষণ হচ্ছেন ৩ জন

নিলা চাকমা:করোনা মহামারীকে ছাপিয়ে এখন ধর্ষণের মহামারী শুরু হয়েছে দেশে। পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল, টিভির পর্দায় নিয়মিতভাবেই নারীর সম্ভ্রমহানির খবর লিড আইটেম হিসেবে স্থান পাচ্ছে। এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণ, কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণী গণধর্ষণ, রাজশাহীর মোহনপুরে ছাত্রী ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে চাকমা প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণ, চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ে কিশোরী ধর্ষণসহ অসংখ্য ধর্ষণের সংবাদে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। ধর্ষকদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরাও। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ জনের থেকে বেশি ধষর্ণ হচ্ছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি যার মধ্যে গণধষর্ণের শিকার ২০৮ জন, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৪৩ জন, ধর্ষণের পর লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।

পরিবার ও সমাজের চাপে নারীরা ধর্ষণের কথা বলতে চান না। ধর্ষণের দায় নারীদের ওপর চাপানো হয় বলে অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েও চুপ থাকেন। আবার ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়।

মানুষের ওপর নারীদের বিশ্বাস উঠে গেছে আজ। কাউকেই তারা আর বিশ্বাস করার সাহস পাযনা। যাকে দেখে তাকেই সন্দেহ হয়, এমনকি সৎ বাবাও সন্দেহের বাইরে নয়। ফুটপাতে হাঁটার সময় কোনো পুরুষ পাশ দিয়ে গেলেই নারীর গা শিউরে উঠে। হৃদপিন্ডের কম্পন বেড়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি হিংস্র থাবা গ্রাস করছে তাকে। হয়তো জাপটে ধরে লুটে নেবে তার সম্ভ্রম।

কিন্ত এভাবে আর কতদিন? কবে মিলবে পরিত্রাণ? কবে ভাঙবে অচলায়তন? আইনের ফাঁকফোকড় গলিয়ে কতদিন হায়েনারা পার পেয়ে যাবে? এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। গণপরিবহন, অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নির্জন রাস্তা সিসিটিভির আওতায এনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের সাজা দৃশ্যমান না হওয়ায় ধর্ষণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তাই অপরাধীদের দৃশ্যমান দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে কন্যা সন্তান পৃথিবীতে আসার সাথে সাথে বাবা মায়ের মুখের হাসি মিলিয়ে যাবে। কন্যাকে নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়বে।

যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণ বন্ধ না হওয়ার পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। এক্ষেত্রে সব মহলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে নারীকেও হতে হবে সমানতালে প্রস্তুত। তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আঘাত এলে করতে হবে প্রতিবাদ। আইনের আশ্রয় নিতে কোনো রকম কুণ্ঠা করা যাবে না।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অনাচারের বিরুদ্ধে সংবাদ কর্মীদের সচেতনতামূলক প্রতিবেদন, প্রবন্ধ রচনা করতে হবে। নির্যাতিত নারী বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তার পাশে থাকতে হবে।

উন্নত সমাজ গঠনে নৈতিক শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। আর এই নৈতিক শিক্ষা প্রদানের প্রধান মাধ্যম হলো পরিবার। পরিবারের ছেলেটি বা পুরুষটি নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে৷ তাই ছোট থেকেই সন্তানকে সেইভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে নারীকে অসম্মান করার আগেই তার বিবেক জেগে ওঠে৷

চখ/এম.ফ.এ

এই বিভাগের আরও খবর