chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার কারণ জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা

ডেস্ক নিউজ: করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পেছনে জিনগত ও ইমিউনোলজিক কারণ জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্বে সুস্থ ছিলো এরকম করোনা রোগে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ১০% এরও বেশি রোগীর দেহে এমন কতগুলি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যেটি ভাইরাসকে (SARS-CoV-2) আক্রমণ না করে বরং শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। আবার অন্য ৩.৫% রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের শরীরে এক ধরণের জিনগত ত্রুটি রয়েছে। এই উভয় গ্রুপের রোগীদের ক্ষেত্রে টাইপ-১ ইন্টারফেরনের (IFN1) অভাব রয়েছে।

টাইপ-১ ইন্টারফেরন (IFN1) মূলত আমাদের শরীরকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আর IFN1 এর অভাব হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে IFN1এর বিপরীতে একটি নতুন এন্টিবডি (অটো এন্টিবডি) তৈরি হওয়া। আর কিছু কিছু রোগীর বেলায় তাদের জিনগত ত্রুটিই দায়ী ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী “সায়েন্স“ এ সদ্য দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ( https://science.sciencemag.org/content/early/2020/09/23/science.abd4570.full এবং https://science.sciencemag.org/content/early/2020/09/23/science.abd4585?fbclid)

উক্ত গবেষণাপত্রে তাঁরা দেখিয়েছেন যে, প্রাণঘাতী করোনায় (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আই.সি.ইউ তে ভর্তি হওয়া রোগীদের কারো কারো অবস্হা গুরুতর হয়। আবার সমবয়সী একইভাবে আক্রান্ত অন্যদের বেলায় তেমন গুরুতর হয় না, যদিও উভয় ক্ষত্রে তাদের জটিল কোন রোগের পূর্ব ইতিহাস থাকে না। “সায়েন্স” এ প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্রে এই অনুসন্ধানগুলো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছে। মহিলাদের চেয়ে কেনো বেশি সংখ্যক পুরুষ এই রোগে মারা যায় তারও একটি মলিকুলার ব্যাখ্যা প্রথমবার তাঁরা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্ট জিলস ল্যাবরেটরি অব হিউম্যান জেনেটিক্স অব ইনফেকশাস ডিজিজেস’ এর প্রধান এবং ‘হাওয়ার্ড হিউজ মেডিকেল ইনস্টিটিউট’ এর ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক জিন-লরেন্ট ক্যাসানোভা বলেছেন, এই IFN1 বিঘ্নই কোভিড-১৯ রোগের প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার কারণ। বর্তমান বাজারে যে সমস্ত প্রচলিত ঔষধ আছে, তা দিয়েই এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হতে পারে, এর জোরালো প্রমাণও তাঁরা দেখিয়েছেন সদ্য প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকীটিতে।

অধ্যাপক জিন-লরেন্ট ক্যাসানোভা এবং যুক্তরাষ্ট্রের “ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস'” এর বিজ্ঞানী হেলেন সু-এর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি চলমান আন্তর্জাতিক প্রকল্প “কোভিড হিউম্যান জেনেটিক এফোর্ট” কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে প্রথম গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়, যাতে বিশ্বজুড়ে ৫০ টিরও অধিক জেনম সিকুয়েন্সিং কেন্দ্র এবং শতাধিক হাসপাতাল জড়িত ছিলো। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এশিয়া, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা এবং মধ্য প্রাচ্য সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর গুরুতর কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলো। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে সংক্রমিত করোনা মহামারী রোগটি এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রায় ১৫% জটিল ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির মলিকুলার এবং জিনগত ব্যাখ্যার মাধ্যমে বর্তমানে সবচেয়ে তীব্র সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে কোভিড-১৯কেই সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারা যাচ্ছে।

একটি গবেষণায় গবেষকেরা ৬৫০ জনেরও বেশি রোগীর রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন, যারা সার্স-কোভ-২ এর কারণে প্রাণঘাতী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবং যাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ মারা গিয়েছেন। গবেষকেরা উপসর্গহীন অথবা মৃদু সংক্রমিত আরও ৫৩০ জনেরও বেশী কোভিড আক্রান্ত রোগীর নমুনাও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তারা প্রাথমিকভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষার জন্য পরিচিত ১৩টি জিনে দু’টি গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য অনুসন্ধান করেছিলেন। এই জিনগুলো IFN1কে পরিচালনা করে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এই আক্রান্ত রোগীদের কোষে কোন IFN1এর উপস্থিতি ছিলো না, যেটি সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে থাকে।

একটি রহস্যজনক অটো-ইমিউন শর্ত:

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত ৯৮৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তাদের সংক্রমণের শুরুতে ১০ শতাংশেরও বেশি রোগীর শরীরে ইন্টারফেরনের (IFN1) বিরুদ্ধ অটো-অ্যান্টিবডি রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই (৯৫%) ছিলেন পুরুষ রুগী। ধারনা করা যায় এই অটো-অ্যান্টিবডি সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরল। এলোমেলোভাবে নির্বাচিত ১২২৭ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির মধ্যে কেবলমাত্র চার জনের শরীরে তা পাওয়া গেছে। এই সমস্ত অনুসন্ধানগুলি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করে যে, এই অটো-অ্যান্টিবডিগুলো প্রকৃতপক্ষে কিছু মানুষের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার অন্তর্নিহিত মূল কারণ। ফলাফলগুলি আরও নিশ্চিত করার জন্য কিছু মেডিকেল ইন্টারভেনশন প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, ওষুধ হিসাবে বর্তমান বাজারে দুই ধরণের ইন্টারফেরন পাওয়া যায়, যা ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিসের রোগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীর জিনগত পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে কেবল ভাইরাস একা রোগীর অবস্থা গুরুতর করতে পারে না যদি না তার জিনে কোন ত্রুটি থাকে।

“কোভিড হিউম্যান জেনেটিক এফোর্ট” নামে পরিচিত আন্তর্জাতিক এই কনর্টিয়ামের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ থেকে অংশ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান বিজ্ঞানী ও ঢাকায় অবস্থিত “নিউরোজেন চিল্ড্রেন’স হেলথ কেয়ার” এর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেস্টা ড. মোহাম্মদ উদ্দিন ড্যাফিল; নিউরোজেন চিল্ড্রেন’স হেলথ কেয়ারের ‘সেন্টার ফর প্রিসিশান থেরাপিউটিক্স’ ও ‘জেনেটিকস এন্ড জেনোমিকস সেন্টার’ বিভাগের হেড অব ক্লিনিকাল রিসার্চ ডা. কে. এম. ফোরকান উদ্দিন।

এই বিভাগের আরও খবর