১ টাকার জন্য বাস থেকে ফেলে হত্যা
মেহেদী হাসান কামরুল : মাত্র এক টাকার জন্যে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে এক যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। হতভাগ্য যাত্রীর নাম-মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)। গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত দশটার দিকে নগরীর জিইসির মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বাসের চালক রাকিব (২২) ও হেল্পার আরিফকে (১৯) আটক করেছে। একে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে জসিমের পরিবার।
জসিম পটিয়া থানার দক্ষিণ ছনহরা গ্রামের আলী নবীর ছেলে।তিনি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় এইচএনএস গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন।তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি একই এলাকায় বসবাস করতেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে জসিম উদ্দিন ১০ নং সিটি বাসে (চট্টমেট্রো জ-১১-২০৩১) চড়ে আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট যাচ্ছিলেন। এসময় ভাড়া নিয়ে বাসের হেল্পার আরিফের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আরিফ জসিম উদ্দিনকে কিল ঘুষি মারে।পরে চলন্ত বাস থেকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় সড়কে উপস্থিত সাধারণ মানুষ গাড়িটিকে আটক করে।
নিহত জসিমের ভাতিজা আব্দুল কাদের জুয়েল চট্টলার খবরকে জানান, বাসের হেল্পার আরিফ পুলিশকে জানিয়েছে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে আমার চাচাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। তবে এটি আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে না। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।২০১৭ সালে আমার আরেক চাচা আইয়ুব খানকে (জসিম উদ্দিনের ভাই) অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীরা তখন ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু আমার চাচা দাবিকৃত টাকা না দিয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশের সহায়তা নেন। তখন পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে অপহৃত আইয়ুব খানকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তাদের আদালতে পাঠায়। এর পর থেকে অপহরণকারীরা আমার চাচার পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এই ঘটনা তারই জের ধরে ঘটেছে। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই। বাসের চালক ও হেল্পারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হবে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুজ্জামান চট্টলার খবরকে জানান, জসিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা গাড়ি চালক রাকিব ও হেল্পার আরিফকে আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, জসিম উদ্দিন হেল্পার আরিফকে ১২ টাকা ভাড়া দেন। তার ভাড়া ছিলো ৭ টাকা। ৫টাকা ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশায় তিনি হেল্পারকে ১২ টাকা দেন। কিন্তু হেল্পার তাকে ৪ টাকা ফেরত দেয়। ১ টাকা কম হওয়ায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে কিল ঘুষির ঘটনা ঘটে। পরে হেল্পার আরিফ জসিম উদ্দিনকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এসময় তিনি মাথায় প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান।
ওসি শাহিনুজ্জামান আরও জানান, আটক আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হত্যাকান্ডের সাথে অন্য কারও সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
এএমএস/