chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অনলাইনে পড়া, দিশেহারা শিশুরা : যেন পরিণত হচ্ছে রোবটে!

নিজস্ব প্রতিনিধি : করোনা পরিস্থিতিতে ঘরের চার দেয়ালে বন্দী থেকে একদম ভালো নেই আমাদের শিশুরা। বন্ধ তাদের খেলাধুলো, বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও হচ্ছে না দিনের পর দিন।

শুধু তাই নয়, করোনা বাস্তবতায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবন। অন্যদিকে শিশুদের মা-বাবাসহ অভিভাবকরাও এই পরিস্থিতিতে নানামুখী হতাশা আর চাপের মধ্যে রয়েছেন তাদের প্রিয় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী শিশুরা পরিচিত হয়েছে অনলাইন স্কুলের সঙ্গে। শিশুরা এখন সপ্তাহের টানা পাঁচ দিন সাত থেকে আট ঘণ্টা কম্পিউটার বা ফোনের সামনে একা সময় কাটাচ্ছে। স্কুলে থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প আর খেলাধুলার মধ্যেই সময়টা কেটে যেতো কিন্তু এখানে একা, নিঃসঙ্গ, ফলে অনলাইনে পড়ার চাপে দিশেহারা অবস্থা এখন শিশুদের।

এদিকে বিশ্বের অনেক দেশের শিশুরা অনলাইন স্কুলের সাথে পরিচিত থাকলেও আমাদের দেশে শিশুদের অনলাইন সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলো না। তবে অন্যান্য দেশের মতোই আমাদের দেশের শিশুদের শিক্ষা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রযুক্তির নানা ব্যবহার শুরু হয়েছে দেশেও।

কিছু কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইন ক্লাস চলছে। থেমে নেই শহর, জেলা উপজেলার ছোট ছোট স্কুলগুলোও। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেটা একেবারেই থেমে গিয়েছিল তা আবার চালু হয়েছে। পড়াশোনার মধ্যে থাকায় শিক্ষার্থীদের ঘরে বন্দি থাকার বিরক্তিটা কমেছে।

কিন্তু তাতে কি শিশুরা মুক্ত, স্বাধীন? শৈশবকে তারা উপভোগ করতে পারছে? না, পারছে না। কারণ তারা তো সব দিন দিন সবাই রোবট হয়ে যাচ্ছে। সুইচ অফ-অন করেই যেন তাদের শিক্ষা জীবন চলছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের একঘেয়ে, একাকী, দীর্ঘসময় ধরে অনলাইন ক্লাসের বাধ্যবাধকতায় পড়তে হচ্ছে। এতে তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে।

অভিভাবকরা অনলাইনে পড়ালেখা নিয়ে শুরু থেকে একটু অস্বস্তিতে থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে মেনে নিতে হয়েছে। তবে মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা অনেক অভিভাবক সপ্তাহে চার দিন ক্লাস নেওয়ার দাবি করছেন।

তারা মনে করেন, রবি সোম ক্লাস করার পর মঙ্গলবার ছুটি রেখে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চার দিন ক্লাস করানো হোক। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে সব হোম ওয়ার্ক দেওয়া হোক। তাহলে শিশুরা কিছুটা স্বস্তি পাবে।

চট্টগ্রাম শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিশুরা অনলাইনে ক্লাস করতে বসে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে। মাঝখানে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে সেই ক্লাস একটানা চলে দুপুর দেড়টা থেকে ২ টা পর্যন্ত।

এখানেই শেষ নয়। ক্লাস শেষে স্কুল থেকে দেওয়া হোম ওয়ার্কও করতে হচ্ছে এসব কোমলমতি শিশুদের। ফলে তাদের উপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ পড়ছে। তাই তাদের শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য সপ্তাহে চার দিন ক্লাস নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুরা যত এই ডিজিটাল দুনিয়ায় বেশি সময় ব্যয় করবে, তাদের সৃজনশীলতা হ্রাস পাবে। এটি তাদের মানসিক বিকাশের পক্ষে ভাল ফল বয়ে আনবে না।

তারা মনে করেন যতক্ষণ শিশুরা অনলাইন ক্লাসে মনযোগী থাকে ততক্ষনই পুরো সময়টাই মোবাইলের স্ক্রিনে, নয়তো কম্পিউটারের সামনেই বসে থাকতে হয়। পরীক্ষাও দিতে হচ্ছে অনলাইনে।

এতে একটা শিশু সপ্তাহের টানা পাঁচ দিন সাত থেকে আট ঘণ্টা কম্পিউটার বা ফোনের সামনে একা সময় কাটাচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের প্রভাবে আবার অনেক শিশু গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারপরেও সময়ের বাস্তবতায় তা মেনে নিতে হচ্ছে।

সম্প্রতি শিশুদের জন্য কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এ বিষয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছে। ইউনিসেফ বলেছে, বাচ্চারা যখনই গ্যাজেট ব্যবহার করে, তখন মা-বাবার একজনের উচিত তাদের সঙ্গে থাকা।

স্কুলের পাঠানো পিডিএফের ভরসায় ক্লাস নিচ্ছেন জীবনে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে বসা শিক্ষক। সেই ক্লাসের পড়া শুনে, বুঝে হোমওয়ার্ক করতে হচ্ছে বাচ্চাকে। এই পরিস্থিতিতে অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক।

ফলে সন্তানকে এ চাপ থেকে উত্তরণের জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভুমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চাদের ডিজিটাল ডিভাইসের খারাপ প্রভাবগুলো বুঝিয়ে বলা এবং তাদের বকা ঝকা না করা ও মারধর থেকে বিরত থাকাটাই উচিৎ মা বাবাদের।

অন্যদিকে দেখা গেছে, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা একটানা ক্লাস করানোর পরে হোম ওয়ার্ক দেন। সেসব হোম ওয়ার্ক মা-বাবাদের প্রিন্ট করিয়ে এনে শিশুদের দিয়ে করিয়ে তা আবার স্ক্যান করে শিক্ষকের মেইলে পাঠাতে হয়। লকডাউনের সময় অভিভাবকদের এসব করা সম্ভব হলেও এখন অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় তারা অফিসে চলে যান।

ফলে পুরো চাপটাই পড়ছে শিশুদের ওপরে। শুধু তাই নয়, অনলাইন ক্লাসে একটি শিশু পড়া বুঝলো কি বুঝলো না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষক যা বোঝালেন সেটা শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝলো সে বিষয়টিও বোঝার কোনো উপায় নেই। তাই বেশি ক্লাসের চাপ না দিয়ে ভালোভাবে বুঝিয়ে পড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিভাবকরা।

তারা বলছেন, বেশি পড়ার চাপ, হোমওয়ার্ক না দিয়ে শিশুদের অল্প পড়ানো হোক কিন্তু সেই পড়া যেন আনন্দময় হয়,সেটাই বেশি জরুরি। শুধু শুধু নাম মাত্র কোর্স কমপ্লিট করে কোনো লাভ নেই, যদি আমার শিশুটি পড়া না-ই বোঝে।

চখ/রাজীব

এই বিভাগের আরও খবর