ভারতে ৪ মাস কারাভোগের পর কুড়িগ্রামে ফিরল ২৫ বাংলাদেশি
ডেস্ক নিউজ : ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলহাজতে বিনা দোষে ৪ মাস কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরল ২৫ বাংলাদেশি।
সকল আইনি জটিলতা শেষে মুক্তির আদেশের চারদিন পর আজ বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ভারতের কুচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে তারা দেশের মাটিতে পা রাখলো।
তারা সকলেই কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্যাপারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। চেকপোস্টের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে বিকালে চিলমারীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন: সাইফুল ইসলাম, ছবিয়ার রহমান, চাঁন মিয়া, আবুল ফরিশ, আনোয়ার হোসেন, রাজা মিয়া, মাইদুল ইসলাম, মানিক মিয়া, রেজাউল করিম, সহিদুল ইসলাম, নিরু মিয়া, হযরত আলী, আনারুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, নবিকুল ইসলাম, বিপ্লব মিয়া, এছানুল হক, আবু হানিফ, নুরুল হক, আবু বক্কর সিদ্দিক, আয়নাল হক, শাহ আলম, মো. হাফিজুর, আলম মিয়া ও ইউনুস আলী।
তবে এর আগে ভারতে আটকৃতদের মধ্যে বকুল মিয়া নামে একজন ধুবড়ি জেলহাজতে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে ২৬ জন টিমের ২৫জন মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেন।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ কমিটির আহ্বায়ক এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভারত সরকারের প্রসিকিউশন ওই বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফরেনার্স আইনে মামলা কলঅফ (প্রত্যাহার) করেন।
তিনি বলেন, গত ২৯ আগস্ট ভারতের ধুবড়ি আদালত প্রায় ৪ মাসের হাজতবাস শেষে মুক্তির আদেশ দেন। এরপর অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় পরিষদের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান জানান, বৈধ পাসপোর্ট ও তিন মাস মেয়াদের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে চিলমারীর ব্যাপারীপাড়া গ্রামের ২৬ জন অধিবাসী চলতি বছরের প্রথম দিকে আসাম রাজ্যের জোরহাট এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে যান। এরপর করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সেখানে আটকা পড়েন তারা।
এ অবস্থায় ভারতের দ্বিতীয় দফা লকডাউনের শেষ দিন ৩ মে কিছু সময়ের জন্য চেকপোস্ট খুলে দেওয়া হবে এমন খবরের ভিত্তিতে বাড়ি ফেরার জন্য জোরহাট থেকে চেংরাবান্ধ্যার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। কিন্তু পথিমধ্যে ধুবড়ি জেলার চাপোর থানা পুলিশ তাদের আটক করে। এ সময় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ফরেনার্স আইনে মামলা দিয়ে তাদের ধুবড়ি জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে যান।
বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন বাংলাদেশি দু’টি মিনিবাসে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের।
ভারতে মাছধরা ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশিকে পরদিন (৩ মে) আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ। করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে।
গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দেশটির পুলিশ।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট ও শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থানে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।
তাদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা। এরমধ্যে গত ১ জুলাই কারা হেফাজতে বকুল মিয়া নামে এক বাংলাদেশি মারা গেলে চারদিন পর তার মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। অপর ২৫ বাংলাদেশি প্রায় চার মাস পর কারামুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন।
চখ/রাজীব