ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার!
প্রযুক্তি ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর হবে, সে সম্পর্কে এবার মুখ খুললেন বুকার পুরস্কার বিজয়ী এক ব্রিটিশ লেখক। তার নাম হাওয়ার্ড জ্যাকবসন। ২০১০ সালে এ পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়া তিনি ক্যামব্রিজের শিক্ষার্থীও ছিলেন।
বিখ্যাত এ লেখকের মতে, ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা হয়ে যাবে অশিক্ষিত, মূর্খ! এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বুকার পুরস্কার বিজয়ী এ লেখক আরও বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং প্রচুর পরিমাণে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এর কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।
জ্যাকবসন জানান- শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, তিনি নিজেও বইয়ের প্রতি আর তেমন মনোযোগ দিতে পারেন না। কারণ তার মনোযোগের একটা বড় অংশও চলে যায় মোবাইল-কম্পিউটারের স্ক্রিনের পেছনে।
তিনি বলেন, ‘আমি আগে যে পরিমাণ বই পড়তে অভ্যস্ত ছিলাম এখন আর পড়তে পারি না। আমার মনোযোগ চলে যায় ইলেকট্রনিক সব পর্দার দিকে। আমি সাদা কাগজ চাই, কাগজের ওপর আলো চাই।’ হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আরও বলেন, ‘আগামী ২০ বছরের মধ্যে আমরা এমন শিশুদের পাব, যারা পড়তে পারবে না। ’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যানে যা দেখা গেছে তাতে জ্যাকবসনের কথারই সত্যতা মিলেছে, যা রীতিমত ভয়াবহ! পরিসংখ্যানটি বলছে- পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষার মান অনেক নেমে গেছে। ১৯৮২ সালের পর গত বছরই প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সাহিত্য পড়ার হার সবচেয়ে কম।
গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বছর মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ বছরে মাত্র একটি বই পাঠ করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই বাড়ছে তরুণদের অনলাইনে কাটানো সময়ের হার। পাঁচ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে কাটায় গড়ে ১৫ ঘণ্টা করে।
মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একাকিত্বের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। একইসঙ্গে, সেই ২০০৭ সালে বাজারে আইফোন আসার পর থেকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটেছে। সূত্র- দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে দেশের খ্যাতিমান লেখক সেজান মাহমুদ বলেন- আসলে শিশুরা মূর্খ হবে নাকি আরো স্মার্ট হবে তা নির্ভর করে বাবা-মা বা সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা কী তুলে দিচ্ছে শিশুদের হাতে, তার ওপরে। এখানে বলতে চাই, আমি আমার জেনারেশনের মধ্য টেকনোলজিতে আমার ছেলেদের থেকেও এগিয়ে, এমন কি আমেরিকার গড় শিক্ষকদের তুলনায় বহুদূর এগিয়ে থাকি। এটা অহংকার না, বাংলাদেশের গ্রাম থেকে-আসা একজন আধুনিক মানুষের যথার্থ দাবি।
তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, আমি অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে, গবেষণার ডেটা এনালিসিস করতে যে সব সফটওয়্যার ব্যবহার করি তা লোকজন পয়সা দিয়ে কোর্স করে শেখে। একটা বা দুইটা জেনেই একটা বিশেষ ক্যারিয়ার হয় তাদের। এটা সত্য।
সেজান মাহমুদ আরও বলেন, ফোনে এখন অফিশিয়াল কাজ, ক্যালেন্ডার, ব্যয়ামের হিসাব, পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা, ইতিহাস, দর্শন, মেডিকেল এমনকি সংগীত, সিনেমার নানান কলাকৌশল ব্যবহার সম্ভব। আমাদের দুই ছেলেই ফোনে আসক্ত। ফোনে গান, বই পড়া, ভিডিওগ্রাফি সব করছে তারা। এমন কি জুম ক্লাসও করতে পারে। স্মার্টনেসের দিক থেকে ওরা বহু শিশুদের থেকে এগিয়ে তা নিজের ছেলে জন্যে বলছি না। তবে, আমরাও স্ক্রিনটাইম লিমিট করে দিই, অন্য কাজকর্ম করতে উৎসাহিত করি, বাধ্যও করি।
নিজেকে দিয়ে আরেকটা কথা বলি- আপনি যদি ফেসবুকে শুধু লোকজনের ছবি, কার কী ভাইরাল হলো, গীবত আর পরচর্যার দিকে মনযোগ দেন (যা বেশিরভাগ মানুষ করে), তাহলে শুধু শিশুরা না, বড়রাও মূর্খ হয়ে যাবেন। আমি নিজেকে পন্ডিত ভাবি না, এজন্যেই ফেসবুক থেকে সদ্য প্রকাশিত ঘটনা প্রবাহ, উন্নতমানের লেখা, সাহিত্য (বেশিরভাগ বিদেশি সাহিত্য, কিছু দেশেরও) পড়ি এবং জানি।
খ্যাতিমান এই লেখক সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন- তাই, ধারালো অস্ত্রটার দোষ না দিয়ে তা দিয়ে কী কাজ করছেন সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। তা দিয়ে কি জীবন বাঁচাচ্ছেন নাকি জীবন ছিনিয়ে নিচ্ছেন? মুর্খ হওয়ার সামগ্রী সবসময় বেশি; জ্ঞান পিপাসু বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি করুন শিশুদের মনে।
এমআই/