chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

করোনার প্রভাব পড়েনি বে টার্মিনাল কাজে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারী করোনাকালের সময় এগুচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালের কাজ। তবে খুবই ধীর গতিতে। এই প্রকল্প ঘিরে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মহাকর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রকল্প কাজ নানা কারণে ধীরে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে,করোনার কোন প্রভাব পড়েনি টার্মিনালটির ধারাবাহিক কাজে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা মনে করেন,করোনার কিছুটা প্রভাব পড়েছে বে টার্মিনালের কাজে। তাই হয়তো প্রত্যাশিত সময়ে নির্মাণ শেষ করা যাবে না। তবে টার্মিনালটির নির্মাণ শেষ করতে পারবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে বড় ধরনের কোন সঙ্কট হবে না।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, বে টার্মিনাল কাজে করোনার কোন প্রভাব নেই। আগের মতই কাজ চলছে। ইয়ার্ড নির্মাণ, মাটি ভরাট থেকে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ সবই হচ্ছে। আশা করছি সময়তমত প্রকল্প কাজ শেষ হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, বে টার্মিনাল নির্মাণ শেষে পুরোদমে কাজ শুরু হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা যাওয়ার সংখ্যা বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে পন্য ওঠানামার পরিমাণও। ব্যবসায়ীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন কবে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। তবে ধীরে হলেও শুরুর দিকে প্রকল্প কাজ কিছুটা গতি পেয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘ সময় লকডাউনের কবলে পড়ে কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। যদিও বন্দও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে কোন সমস্যা হয়নি। বাস্তবে প্রকল্প কাজেও দেখা দেয় কিছুটা ধীর গতি। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের জমকালো অনুষ্ঠানের পরই কাজের প্রকৃত অগ্রগতি দেখতে মুখিয়ে আছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। প্রথমে জমি অধিগ্রহন নিয়ে ছিল বিস্তর ঝামেলা। পরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাথে জমি নিয়ে সঙ্কট কেটে যায়। ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর অনাপত্তিপত্র হস্তান্তর করে সিডিএ। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েও শুরু হয় আরেক দফা জটিলতা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পরিবেশ অধিদপ্তর অনাপত্তি দেয়। এর পর বেসরকারি জমি অধিগ্রহণ নিয়ে পুনরায় বিপত্তি দেখা দেয়। এতে কেটে যায় আরও দুই বছর। পরে ছাড়পত্র মেলে। আশা করা হয়েছিল এরপর থেকে পুরোদমে প্রকল্প কাজ শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে জোরেশোরে কাজ শুরু হয়নি।

বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জার্মান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কে এস কনসালটেন্টস লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি  করে। এতে ব্যয় করা হয় প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। প্রাথমিক সমীক্ষায় প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। পরে ওই সিন্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প কাজ করা হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তÍ নেয় সরকার।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা হালিশহর এলাকার সাগর উপকূলে নির্মিত হবে বে-টার্মিনাল। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০ কোটি ডলার প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এই প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অপারেশনাল কর্মকান্ড এলাকার প্রায় ছয় গুন বড়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাঁচ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে না।  ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা আরও এক হাজার ৬০০ একরসহ দুই হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণের মাধ্যমেই গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন আরেক বন্দর বে-টার্মিনাল। পতেঙ্গা ও হালিশহর সমুদ্র্র উপকূলভাগে বিস্তির্ণ ভূমি এবং সাগরঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে বে-টার্মিনাল। বড়সড় আকৃতির জাহাজ ভেড়ানো, ঘোরানোর জন্য পর্যাপ্ত ড্রাফট (জাহাজের নিচের অংশের গভীরতা), মালামাল লোডিং-আন লোডিং করা এবং বেশিসংখ্যক জাহাজ নোঙর সুবিধার সমন্বয় থাকবে এই টার্মিনালে। ‘খোলা সমুদ্র বন্দর (ওপেন সী-পোর্ট)’ হিসেবে বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে হাজার বছরের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। এটি হবে বন্দরের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অবকাঠামো। দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চাহিদা ও চাপ সামাল দিতে সক্ষম হবে বে-টার্মিনাল।

এসএএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর