chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বাঁশখালীতে হারুন চেয়ারম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২ আগস্ট একুশে পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি মো. বেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে বাঁশখালীর সর্বদক্ষিণের ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদের সহযোগীরা। বিষয়টি জানার পর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হস্তক্ষেপে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে উদ্ধার করেন হারুনের বাড়ি থেকে। এ ঘটনায় হারুনের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। এজাহারে হারুনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তাকে আসামি করা হয়নি।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, হারুন সরাসরি অপহরণ করেননি। তবে তার বাড়িতে যেহেতু বেলালকে পাওয়া গেছে, তাই এজাহারে হারুনের নাম আছে। এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

গত এক বছরে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব ছনুয়ায় বিভিন্ন সময় অভিযান চালায়। গত ৬ মাসে এসব অভিযানে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হারুনুর রশিদের ঘনিষ্ঠ চার ডাকাত নিহত হন। তাদের নাম সুলতান বাহাদুর ওরফে বাহাদুর ডাকাত, নুরুল আলম, মোহাম্মদ হোসাইন ও আবু তালেব। হারুনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জমি দখল, বনভূমি দখল, মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও নগরীর পাঁচলাইশ থানা ও আদালতে তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলা থেকে তিনি খালাস পেলেও আটটি বিচারাধীন।

বাঁশখালীর সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় ইউনিয়ন ছনুয়া। এখানকার অধিকাংশ মানুষের পেশা লবণ চাষ, মাছ চাষ ও সামুদ্রিক মাছ আহরণ। কোনো ঘটনা ঘটলে থানা থেকে পুলিশ যেতেও দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এলাকার খেটে খাওয়া অসহায় মানুষদের সুযোগকে পুঁজি করে ছনুয়ার চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ও তার সহযোগীরা তান্ডব চালায়। এতে অনেক শিক্ষিত ও অভিজাত লোক ওই ইউনিয়ন ছেড়ে উপজেলা সদরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।

উপকূলীয় বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, হারুন চেয়ারম্যান বন বিভাগের ১৬০ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, বন বিভাগের জমি বন্দোবস্তি নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক আবু সিদ্দিকের সঙ্গে হারুন চেয়ারম্যানের বিরোধ তৈরি হয়। এর জের ধরে কয়েক দফা হামলার শিকার হন মাস্টার আবু সিদ্দিক। বাধ্য হয়ে তিনি ছনুয়া ত্যাগ করে চাম্বল ইউনিয়নে চলে আসেন। ছেড়ে আসেন পৈতৃক ৩৮০ শতক জায়গা-জমি ও বসতভিটা। তিনি বলেন, একবার অপহরণ করে আমাকে হারুনের বাড়িতে রাখা হয়। খবর পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় আমি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। সে মামলা বিচারাধীন।

তিনি বলেন, বেশি কথা বললে আমি উপজেলা এলাকায়ও থাকতে পারব না। অপহরণ করে নিয়ে যাবে।

হারুনের সহযোগী প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগে ৯টি মামলা রয়েছে। হারুনের ভাই মো. আলমগীরের বিরুদ্ধেও আছে আটটি মামলা।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এম হারুনুর রশিদ। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হলেও তিনি দ্রুত আওয়ামী লীগার বনে যান। সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে। এভাবে তিনি সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্ভয়ে চালিয়ে যান।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদ বলেন, আমি কাউকে অপহরণ করিনি। বিরোধ মীমাংসা করে দিয়েছি। আপনি এসবই লিখবেন। তার বিরুদ্ধে মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কথা বলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর আর ফোন ধরেননি।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ছনুয়ায় র্যা বের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে ৪ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। তারপরও ছনুয়ার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এই বিভাগের আরও খবর