চসিকের ২ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেন মেয়র নাছির
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ কোটি টাকা কম।
আজ মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে চসিকের পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের শেষ বাজেট উপস্থাপন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
এসময় ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদনের কথা জানানো হয়।
নগরের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত প্রদানকালে প্রস্তাবিত বাজেটের রূপরেখা তুলে ধরে মেয়র নাছির বলেন, আমাদের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক। তাই তাদের যত অভিযোগ ও অনুযোগ এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি মেগাসিটি, স্মার্ট সিটি, নির্মল শহর, নির্মল পরিবেশ বান্ধব শহর নগরবাসীর প্রত্যাশা। সামর্থ্যের মধ্যে সেই প্রত্যাশা পূরণে চসিক নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বীকার করতে হয় চসিকের যতটুকু সদিচ্ছা আছে ততটুকু আর্থিক সক্ষমতা নেই। তাই আর্থিক সক্ষমতা ছাড়া নগরবাসীর শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ করা যায় না। আর্থিক সক্ষমতা না থাকাতে পৌরকরের ওপর নির্ভর করে সব কর্মকা- পরিচালনা করতে হয়।
নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হলে সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এটা করতে হলে আইনি প্রক্রিয়ায় যে সুযোগ আছে সেটা গ্রহণের বিকল্প নেই। সে কারণেই আইনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পৌরকর পুনর্মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, কিন্তু এটা করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি এবং প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। এতে চট্টগ্রামই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি আমি সফল হতাম, তাহলে বর্তমানে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয়ে যেত- ফলে প্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করা সহজ হতো।
মেয়র নাছির বলেন, এ নগরেই আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। এখানেই আমার অস্তিত্ব ও বসবাস। স্বাভাবিকভাবেই জন্মভূমির প্রতি সবার আকর্ষণ ও দুর্বলতা থাকে। আমিও ব্যতিক্রম নই। দায়িত্ব দায়বদ্ধতার প্রতি আমি শতভাগ অনুগত। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আমৃত্যু মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। তাই এই নগরবাসীর সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকবো। কারণ আমি এই নগরবাসীর কাছে অনেক বেশি ঋণী। এ ঋণ শোধ করার চেষ্টায় থাকবো সর্বক্ষণ।
মেয়র হিসেবে আমার মেয়াদের এ শেষ দিনে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি চির ঋণী হয়ে থাকার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করছি-কেননা গত মেয়র নির্বাচনে তিনি আমাকে মেয়র পদে সমর্থন দিয়েছিলেন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় নগরবাসীর কাছে, যারা আমাদের পরিষদকে এই নগরের নাগরিক সেবা ও উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।
তিনি চসিকের অভিভাবক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ উন্নয়নকাজের দাতা সংস্থা, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি স্থানীয় রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব এবং গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা আমার পথ চলার সারথী ও সাথি। তাদের সঙ্গে আমার বন্ধন কখনো ছিন্ন হবে না, বরং সুদৃঢ় হবে। এর আগে চসিকের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট সাধারণ সভায় পাস করা হয়।
বাজেট অধিবেশন পরিচালনা করেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, জোবাইরা নার্গিস খান, প্রফেসর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, অর্থ ও সংস্থাপন কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরন, চসিক কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চসিক সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, রাজস্ব কর্মকর্তা সাহেদা বেগম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরসহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ।
ইতিমধ্যেই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
২০১৫ সালে সাবেক মেয়র মঞ্জুর আলম মঞ্জুকে হারিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হন। গত ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। করোনায় পরিস্থিতির জন্য ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে কমিশন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছিলেন।
করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে তখন সবকিছুই স্থগিত হয়ে যায়। আর, গত ১৪ জুলাই করোনা মহামারির কারণে নির্বাচন আপাতত করা যাবে না উল্লেখ করে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছিলো, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া ও পাহাড় ধসের কারণে ৫ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্ভব নয়। এর ফলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এসএএস/এএমএস