chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মসলার বাজারে নেই ঈদের আমেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবছর ঈদুল আজহা এলেই চাহিদা বাড়ে মাংস রান্নার অন্যতম উপকরণ মসলার। এলাচ, দারুচিনি, জিরা, লবঙ্গ, পাঁচফোড়নসহ প্রায় সব মসলা পণ্যের চাহিদার পাশাপাশি বাড়ে দামও। কিন্তু্ এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। চলমান করোনা ভাইরাস প্রভাব ফেলেছে এবারের মসলার বাজারে। ঈদের আগে নগরীর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে তেমনটা বাড়েনি মসলার দাম। বলা যায় এ বছর মসলার বাজার এক প্রকার উত্তাপহীন।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঈদের খুব একটা আয়োজন নেই। আবার ঈদ ছাড়াও বিয়ে-মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য মসলাপাড়ায় যে উৎসবের ধুম লেগে থাকতো, করোনার কারণে সেসব আয়োজনও নেই। এছাড়া পরিবহন সমস্যার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্যের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগে যেখানে পণ্য সরবরাহ ৯০ শতাংশ ছিল, সেটা এখন প্রায় ১০ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে।

পাইকারি বাজার থেকে যেসব পণ্য খুচরা বাজারে যাওয়ার কথা ছিল, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা গেছে। প্রায় কাছাকাছি বাজারগুলোতেই শুধু সরবরাহ চলমান রয়েছে।আর এ কারণে পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্য জমে গেছে। অন্যান্য সময়ের মত ঈদকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। একদিকে চাহিদা নেই, অন্যদিকে বেচাকেনাও নেই। এরপরও চলমান পরিস্থিতিতে যদি ঈদে মসলার চাহিদা বাড়ে, তবুও দাম বাড়ার তেমন আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এদিকে গত ১৩মে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি। তারও একটা প্রভাব মসলার বাজারে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আলোচনার পর বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার মূল্যতালিকা ঘোষণা করে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারী পর্যায়ে কেজি প্রতি ভারতীয় জিরা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায় আর ইরান-তুরস্কের জিরা ৩৪০ টাকা। চায়নার দারুচিনি কেজি প্রতি ২৬৫ টাকা আর ভিয়েতনাম থেকে আমদানী হওয়া ভালোমানের দারুচিনি ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লবঙ্গ কেজি প্রতি ৬৬০, গোল মরিচ ৩৭০ আর এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা।

কিন্তু বর্তমানে এসব মসলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কমে। ওই সময় সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিলো জিরা (ভারত) প্রতি কেজি ৩০০-৩৪০ টাকা, দারুচিনি (চীন) প্রতিকেজি ৩১০-৩৩০ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতিকেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা, লবঙ্গ প্রতি কেজি ৬৮০-৭২০ টাকা, এলাচ প্রতি কেজি ২৮০০-৩২০০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ৫৫০-৫৮০ টাকা, গোলমরিচ (কালো) ৩৬০-৩৮০ টাকা।

এছাড়াও হলুদ (ভারতীয়) ৯৮ টাকা, রসুন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং আদা ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

কাস্টম্সের তথ্য মতে, জুন মাসের মধ্যেই কোরবানিসহ আসন্ন চাহিদাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও হিলিসহ স্থল বন্দরগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ মসলা আমদানি হয়েছে। তাই সামনের সময়ে অন্তত চাহিদা সংকটে বাজার অস্থিতিশীল হবার সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি সোলেমান বাদশা জানান, দেশে পর্যাপ্ত আমদানির বিপরীতে চাহিদা কমে যাওয়ায় লাভ দূরে থাক আমদানি খরচ ওঠানোয় তাদের কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি গরম মসলার ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ ছাড়াও প্রতিবছর ওরশ, মেজবান, বিয়ে-শাদির জন্য বাজারে মসলার চাহিদা ব্যাপক থাকে। কিন্তু করোনার চলমান পরিস্থিতিতে এসব আয়োজন বন্ধ থাকায় মজুদকৃত মসলা অনেকটাই অবিক্রিত রয়ে গেছে। আবার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মসলার সরবরাহ তেমন একটা নেই। এসব কারণে মসলার বাজারে কোরবানির আমেজ নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ী রবিউল আলম বলেন, করোনায় বলতে গেলে মধ্যবিত্তদের পকেট খালি। তাই মানুষ কোরবানি করবে কি না সন্দেহ। যদি কোরবানি করেও সেটা নিতান্তই কম হবে। বর্তমানে মানুষ এখন হিসেব করে চলছে। আগে যেখানে পাঁচ-ছয় আইটেম তরকারি খেত, এখন কোনোভাবেই দিন পার করছে। করোনার কারণে এ বছর আর মসলার বাজারে কোরবানির কদর নাই।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রতিবছর এসময় বেচা-বিক্রির ধুম থাকলেও এ বছর ব্যস্ততা একটু কম। বাজারে সব জিনিসের দাম কম। কোন কিছুর বাড়তি দাম নেই। কোরবানির বাজারে সব মসলাপণ্যের দাম কমেছে। মসলাপাতিসহ সব পণ্যের চাহিদা প্রায় ১০ শতাংশে চলে এসেছে। পণ্যের চাহিদা কম হওয়ার কারণে দাম কম রয়েছে।

এমআই/

এই বিভাগের আরও খবর