chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চিনি দাম লাগাম ছাড়া

 

 

পবিত্র রমজান মাসকে  সামনে রেখে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তর তর করে বাড়তেছে চিনির দাম।কিছু  অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে চিনির পাইকারি বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

অভিযোগ উঠে, কিছু মিলমালিকের এজেন্টদের কারসাজিতে নতুন করে পাইকারি বাজারে চিনির দাম মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। যার প্রভাবে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলমালিকের এজেন্টরা সংকটের কথা বলে বাজারে চিনি ছাড়ছেন না। কিন্তু নগদে উচ্চদামে ব্যবসায়ীদের চিনি সরবরাহ করাতে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

তবে খাতুনগঞ্জের চিনির এজেন্টদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে দামবৃদ্ধি এবং মিলমালিকরা সরবরাহ না করার ফলে চিনির দাম বেড়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।  খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে চিনির দাম নিয়ে হেরফের শুরু হয়। পরিবহন খরচসহ হিসেবে এনে মণপ্রতি ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে গত সপ্তাহের বুধবার পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানালেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে রবিবার চিনির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।

জানুয়ারির মাঝামাঝিতে চিনির দাম মণপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে সিটি গ্রূপের চিনি প্রতিমণ  ২ হাজার ১৭০ টাকা যা প্রতিকেজি ৫৮.১৪ টাকা, মেঘনা গ্রূপের চিনি প্রতিমণ ২ হাজার ১৭৮ টাকা, যা প্রতিকেজি ৫৮.৩৬ টাকা ও এস. আলম গ্রূপের চিনি প্রতিমণ ২ হাজার ১৭০ টাকা, যা প্রতিকেজি ৫৮.১৪ টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

এদিকে গত সপ্তাহে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় সিটি গ্রূপের চিনি প্রতিমণ ২ হাজার ২৪৫ টাকা, যা প্রতিকেজি ৬০.১৫ টাকা, মেঘনা গ্রূপের চিনি প্রতিমণ ২ হাজার ২৩০ টাকা, যা প্রতিকেজি ৫৯.৭৫ টাকা ও এস. আলম গ্রূপের চিনি প্রতিমণ ২ হাজার ২১০ টাকা, যা প্রতিকেজি ৫৯.২১ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গত বুধবারে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। সেখানে সিটি গ্রুপের চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৭০ টাকা, মেঘনা ২ হাজার ৩৬৫ টাকা এবং এস আলম ২ হাজার ৩৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

আবার রবিবার চিনি মণপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কমিয়ে বিক্রি করা হয় বলে জানা যায়। বাজারে সিটি গ্রূপের চিনি বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২ হাজার ২৮০ টাকা, যা প্রতিকেজি ৬১.০৯ টাকা, মেঘনা ২ হাজার ২৯০ টাকা, যা প্রতিকেজি ৬১.৩৬ টাকা এবং এস. আলম গ্রূপের চিনি মণপ্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা কেজিপ্রতি ৬১.৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পিএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এমদাদুল হক রায়হান জানান, গত সপ্তাহে সরকার চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়াতে মিল মালিকরা চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আন্তরিক বলেই চলতি সপ্তাহে দাম আরও কমিয়ে রাখলেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে আমরা চিনির বাজারমূল্য অনুযায়ী এজেন্টদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু সরকার এবং মিলের বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে আমাদের চিনি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে যারা নগদে এবং উচ্চদামে মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে কিনছেন, তাদেরকে চিনির সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এতে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চিনি-ছোলাসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য এখন কিনে রাখছেন। কিন্তু উচ্চদামে যদি এসব কিনতে হয়, তবে রমজানে আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রশাসনের নজর বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

চিনির এজেন্ট মীর গ্রূপের বিক্রয় কর্মকর্তা মো. মফিজ বলেন, মিলমালিকরা আমাদের যে মূল্যে বিক্রি করছে, আমরা সে অনুযায়ী বিক্রি করছি। বাজারে অনেকে বাকিতে লেনদেন করেন, আবার অনেকে নগদে লেনদেন করেন। বাজারটা হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতির উপর নির্ভর করে। এখানে দাম উঠা-নামা করবেই।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে দাম উঠা-নামা করছে। ব্যবসায়ীরা এসবের মধ্যে নেই। সরকার কাঁচামালের দাম বাড়িয়েছে, মিলমালিকরাও দাম বাড়িয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এসবের মধ্যে নেই।

এই বিভাগের আরও খবর