chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

নাছির ঠেকাতে ছালাম সুজন-আছে রেজাউল-তুফান

কে পাচ্ছেন চসিকের মনোনয়ন?-

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)নির্বাচন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৯ জন নেতা।  তাদের মধ্যে আছেন দুজন মেয়র, ব্যবসায়ীক নেতা।  এছাড়াও আছেন প্রয়াত সাংসদের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের এক প্রতিষ্ঠাতার ছেলে।

মেয়র পদে যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন- চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, নগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, এ কে এম বেলায়েত হোসেন, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, কোষাধক্ষ্য সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের আহ্বায়ক মো. ইউনুস, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান, সাবেক প্যানেল মেয়র রেখা আলম, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, প্রয়াত মাইনুদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, ডা. আফছারুল আমীনের ভাই এরশাদুল আমীন, লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার মো. মনোয়ার হোসেন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা দীপক কুমার পালিত, মো. ইনসান আলী। সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।

জানা যায়, বিগত ৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করা আ.জ.ম নাছির উদ্দীন ছিলেন দলের একজন ত্যাগী নিবেদিত সংগঠক। ২০১০ সালের নির্বাচনের আগেই মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেভিওয়েট এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে পিছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। চসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সততার সাক্ষর রেখে পালন করেছেন দায়িত্ব। দুর্নীতি স্বজন প্রীতি ছুতে পারেনি সাবেক এ ছাত্রনেতাকে। নির্বাচনের যে ইশতেহার দিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক নগর গড়ে তোলা। ইশতেহারে দেওয়া পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক নগর গড়ে তুলতে তিনি বরাবর হয়েছেন সফল। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় না থাকার কারণে সেটি তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। মাস ছয় মাস আগেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা প্রকল্প দেওয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে নগরীর দুঃখ খ্যাত চাক্তাই খাল থেকে বাড়াই পাড়া খাল পর্যন্ত খনন করার কাজ শুরু করেন। সব মিলিয়ে বিগত ৫ বছওে অনেকাংশে সফল বলা চলে আজম নাছির উদ্দীনকে।  যার কারণে এবারের নির্বাচনে অনেকটা মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে তিনি। তবে সব কিছু নির্ধারণ করছে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।

মেয়র পদে আওয়ামীলীগের সমর্থন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন তারা হলেন –

এম রেজাউল করিম চৌধুরী

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী । সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি রেজাউল করিম চৌধুরী। পরে সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত। সেভাবে মূল্যায়িত হননি তিনিও। এবারের চসিক মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন এই নেতাও।

আবদুচ ছালাম

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম সরকারের শীর্ষ মহলের সুনজরে ছিলেন গত এক দশক ধরেই। চট্টগ্রামের উন্নয়নের সব বিশেষ কর্মযজ্ঞে তার ওপরেই ভরসা রেখেছে সরকার। গত ১০ বছরে তার হাত ধরে নগরে এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। শীর্ষ পর্যায়ের এই সুনজর তাকে রাখছে সুবিধাজনক অবস্থানে। এর বাইরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশাল একটা অংশের সমর্থন সরাসরি ঘরে তুলতে পেরেছেন তিনি।

জহুর আহমেদ চৌধুরী

বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী জহুর আহমেদ চৌধুরীর পরিবারের প্রতি শেখ হাসিনার বিশেষ নজর থাকার কথা সকলেরই জানা। চসিক মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এই পরিবারের সদস্য হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকা এই ব্যবসায়ী নেতার পরিবারের রয়েছে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁর বড় ভাই মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিজিএমইএ, এফসিবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব দেয়া এই নেতাকেও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন কেউ কেউ। বলছেন শেষ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চমকটি হতে পারেন তিনিই। তবে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে তুফানকে বড় জটিলতায় পড়তে হতে পারে বলে কেউ কেউ দাবি করলেও তার পারিবারিক সূত্র এটি নিশ্চিত করতে পারেনি।

খোরশেদ আলম সুজন

খোরশেদ আলম সুজন হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের  সহসভাপতি। এক সময়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখা সুজন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ছিলেন কিংবদন্তী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার। কিন্তু বাকশাল ছাত্রল গের সভাপতি হিসাবে এক সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করলেও এখনো তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।  অনেক দিন মূল্যায়িত না হওয়া এই নেতা চাইছেন শেষ বয়সে জনপ্রতিনিধি হয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে। সুজনের সবচেয়ে বড় বঞ্চনা হচ্ছে, তিন তিনবার তাকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দিয়ে আবার ফেরত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা অনেকের।

এই বিভাগের আরও খবর