chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

করোনাকালেও বসে নেই রাঙামাটির মেয়েরা

রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ 

এক অদৃশ্য দানব(করোনা ভাইরাস) কাছে জিম্মি বিশ্ববাসী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু করোনার এই তালমাটাল সময়েও বসে নেই রাঙামাটির মেয়েরা। বেছে নিয়েছে অনলাইন বা ই-কমার্স প্লাটফর্মকে। কেউ নিজ হাতে খাবার তৈরি করে ডেলিভারি করছে, কেউ মৌসুমি ফল ডেলিভারি, কেউ কোমরের তাতে বুনছে কাপড়। সেই কাপড় দিয়ে বানাচ্ছে ইয়োগ,ওড়না, পিনোন হাদি, আবার কেউ বাইরে থেকে এনে বিক্রি করছে কসমিটিকসসহ নানা পণ্য । এরফলে একদিকে করছে মানব সেবা,অন্যদিকে আর্থিক সচ্ছলতা আনছে তারা। আজ কথা বলব তাদের কয়েকজনের সাথে-

অর্পা দেওয়ান
তিনি স্নাতক শিক্ষার্থী । পাশাপাশি এক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। করোনা ভাইরাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময়কে অপচয় না করে, লেগে পড়েছেন কাজে। তিনি নিজ হাতে তৈরি করছেন নানা রকমের সিঙারা। ফেইজবুকের পেইজে অর্ডার নিয়ে রাঙামাটির আশে পাশের হোম ডেলিভারিও করছেন নিজে।

এ উদোক্তা বলেন, কবে নাগাদ পরিস্থিতি ঠিক হবে তার হদিস নেই। তাই সে আশায় থেকে লাভ নেই। তাই সময় নষ্ট না করে আমরা যে যেটা পারি সেটা নিয়ে নামতে পারি।

মেরিনা চাকমা
তিনি রাঙামাটি সরকারী কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কলেজ বন্ধ থাকায় রাঙামাটির শহর ছেড়ে গ্রামে এসেছেন। কিন্ত গ্রামে এসেও বসে থাকেননি। কোমেরের তাত দিয়ে বুনছেন বানা রকক কাপড়( ওড়না,হাদি, ইয়োগ)। সেগুলো আশে পাশে গ্রামে এবং পরিচিতদের মাঝে বিক্রি করছেন এবং ফেইজবুক পেইজে তৈরি করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু এখানে সীনাবদ্ধ থাকেনি, টুকটাক পার্লারের কাজ এব সেলায়ের কাজও করছেন।

প্রান্তিকা চাকমা

তিনিও ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে স্থানীয় আনারস,লিচু,আম রাঙামাটিতে হোম ডেলিভারি করছেন এবং ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় কুরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি দিচ্ছেন।
প্রান্তিকা চাকমা বলেন, আমি এ ব্যবসা থেকে বাসাভাড়া থেকে শুরু করে শশুর শাশুড়ীকেও আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে পারছি।

বর্ষা চাকমা
তিনি উপরের ৩ জনের মতো নয়। তার চিন্তাটি সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি মনে করেন, করোনাকালে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দোকান পাট বর্জন করছেন।

তাই মানুষের প্রয়োজনের চিন্তা মাথায় রেখে ফেইজবুকের পেইজের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের দোড়গোড়ায়।

কি ধরণের জিনিসপত্র পাওয়া যায়? এমন প্রশ্নে বর্ষা চাকমা বলেন, আমি প্রধানত কসমেটিকস পন্য সরবরাহ করি। কিন্ত এখন স্বাস্থ্য সামগ্রী যেমন স্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদির প্রয়োজন বেশি। তাই যারা এসব অর্ডার করেন তখন এগুলো কাস্টমারদের পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করি।

অনুপমা চাকমা( ছন্দনাম)

রাঙামাটি জেলার মগবান ইউনিয়নের এক গ্রামে অনুপমা চাকমা( ছন্দনাম)’ র বাস। ২০১৭ সালে ইন্টার মিডিয়েট খারাপ করার পর চট্টগ্রাম গার্মেন্টস চাকরিতে যোগ দেন। সেখানে থেকে খেয়ে কোনমতে জীবন চালাচ্ছিলেন। কিন্ত করোনা ভাইরাস সেটাকে শেষ করে দেয়। গ্রামে ফিরলেন শূন্য হাতে।

গ্রামে এসেই ঠিক করলেন আর শহরে ফিরবেন না বলে। নেমে পড়লেন কৃষি কাজে। খালি জায়গায় বসিয়ে দিয়েছেন লাউ, সিম, শষা,পুঁই শাকের ছাড়াসহ অনেক কিছু। নিয়মিত পানি দিয়ে যত্নও নিচ্ছেন সেই সাথে সেলাইয়ের কাজও করছেন। তিনি আশা করছেন সবজি বিক্রি করে চলতে পারবেন। সেই সাথে সামনে হাঁস,মুরগী পালনের ইচ্ছা আছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাঙামাটি সদরেরর মগবান, জীবতলী ইউনিয়নের বেশ কটি গ্রামে খবর নিয়ে জানা যায়, সেখানকার মেয়েরা কেউ বাগান থেকে ফল সংগ্রহ কাজে বাবা মাকে সাহায্য করছেন, অনেকে সে ফলমূল অনলাইনে অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করছে বিভিন্ন জায়গায়, কেউ বেতের ব্যাগ,পুতির ব্যাগ, কেউ কোমরের তাতে বুনছেন কাপড় । এদের মধ্যই প্রায় এখনও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।

এই বিভাগের আরও খবর