chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মাছ শূন্য জাল, শূন্য ভাতের হাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আকমল আলী রোড বেড়িবাঁধ জেলে পাড়ায় দেখা মিলল এক মানবিক চিত্রের।

একদিকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে জুটছে না নতুন কোন কাজের সন্ধান। পরিবার পরিজনদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে এই জেলে পাড়ার বাসিন্দাদের।

তাই অলস সময়কে পুঁজি করে কেউ বা ব্যস্ত জাল বুননের কাজে, কেউ ব্যস্ত বোট মেরামত কাজে। কেউ কেউ সাগরে ভেসে আসা কাট সংগ্রহ করে জ্বালানির জন্য প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ সাগরের তীরে কাকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তাদের আয় রোজগার শূন্যের কোটায়। সরকারি কোন সহায়তাও পায়নি।

শুভংকর চন্দ্র দাশ নামে এক বোট মালিক চট্টলার খবরকে জানিয়েছেন, বর্ষার এই মৌসুমে মাছ ধরতে গত ১০ দিন আগে হাতিয়া থেকে দুইটি বোটসহ ১০-১২ জন জেলে নিয়ে চট্টগ্রামের এই জেলে পাড়ায় এসেছেন। এখন মাছ ধরা বন্ধ তাই জাল বুনন করে দিন পার করছেন তারা। সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা ওঠে গেলে তারা সাগরে ফিরবে জাল বোট নিয়ে।

গেল বছর ভালো মাছ ধরতে পারলেও এবার লকডাউনে বিপাকে পড়েছে তারা। অন্য কোন কাজও মিলছে না জেলেদের।

হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দা মেহরাজ সাগরে মাস ধরতে আসলেও এখন তার সময় কাটছে জাল বুননে। তিনিও জানান, নিষেধাজ্ঞা ওঠে গেলে তাদের সুদিন ফিরবে।

মাছ শূন্য জাল, শূন্য ভাতের হাড়ি

জেলে পল্লীর বাসিন্দারা চট্টলার খবরকে জানিয়েছেন, ঠিক মত দুই বেলা আহার জুটছে না তাদের কপালে। ধার দেনা করে কোনভাবে এক বেলা খাবার খেয়ে সংসার চালিয়ে গেলেও ঘর ভাড়া দিতে পারছে না অনেকেই।

সুখি রানীর স্বামী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। ছেলে সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাকে তারা। সুখি রানী চট্টলার খবরকে বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। আয় রোজগার নেই। কোন রকম এক বেলা আহার জুটলেও ঘর ভাড়া দিতে পারছে না অভাবের কারণে।  তারা সরকারি কোন সহায়তা কখনো পায়নি বলে অভিযোগ করেন।

জেলে পাড়ার আরেক গৃহীনি বলেন, ধার দেনা করে সংসার চলছে তাদের। ছেলেদের পড়া- লেখার খরচ জোগাড় করতে পারছে না তারা।

মাছ ধরা বন্ধ হলেও বিকল্প কাজ না পাওয়ায় সাগরের কাকড়া ধরে কিংবা কাট সংগ্রহ করে লাকড়ি তৈরি করছেন অনেক জেলে।

কাটগড় থেকে কাকড়া ধরতে বে টার্মিনাল সৈকত এলাকায় এসেছেন গীতা দাশ নামে এক মহিলা। চট্টলার খবরকে তিনি বলেন, স্বামী ছেলেরা সাগরে মাছ ধরতে পারেনা নিষেধাজ্ঞার কারণে। আমরা চলবো কেমনে। তাই কাটগড় থেকে প্রতিদিন সাগরের তীরে এসে কাকড়া ধরেন তিনি। সেই কাকড়া বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

মাছ শূন্য জাল, শূন্য ভাতের হাড়ি।

মাছ শূন্য জাল, শূন্য ভাতের হাড়ি।

Posted by The Daily Chattolar Khabor on Tuesday, June 23, 2020

সুজন দাশ নামে আরেক জেলে বিকল্প কাজ না পাওয়ায় সাগরে ভেসে আসা কাঠ খুঁজতে দেখা গেছে। সুজন দাশ চট্টলার খবরকে বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। তাই বসে না থেকে প্রতিদিন জোয়ারের সাথে আসা কাঠ ও লাকড়ি ধরেন, সেই লাকড়ি জ্বালানির উপযোগী করে রান্নার কাজে ব্যবহার করেন।

এর আগে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে সব ধরনের মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় এ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এই বিভাগের আরও খবর