chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

‘রেড-ইয়েলো-গ্রিন জোনে’ যেভাবে কাজ চলবে

ডেস্ক নিউজ : মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে রাজধানী ঢাকার ৪৫ (দুই সিটির) ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ১১ এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও তিন জেলার বিভিন্ন এলাকাকে ওই জোনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোনে কীভাবে কাজ হবে সেজন্য একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। রোববার (১৪ জুন) এই গাইডলাইন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর

রেড জোন-এ ঢাকার ৪৫টি এলাকার মধ্যে উত্তর সিটির ১৭টি এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা পড়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে রেড জোনে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় ১৫ জুন (সোমবার) থেকে লকডাউন ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

গাইডলাইনটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো… .

রেড জোন- উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন এলাকা

১। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত শিফটে কৃষিকাজ করা যাবে

২। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে, তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে।

৩। বাসা থেকেই অফিসের কাজ করবে।

৪। কোন ধরনের জন সমাবেশ করা যাবে না। কেবল মাত্র অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবে।

৫। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবে, রিক্সা, ভ্যান, সি এন জি, ট্যাক্সিতে বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করবে না।

৬। সড়ক পথ, নদী পথ ও রেল পথে জোনের ভেতরে কোনও যান চলাচল করবে না।

৭। জোনের ভেতর ও বাহিরে মালবাহী জাহাজ কেবলমাত্র রাতে চলাচল করতে পারবে।

৮। এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান, ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকানে কেবল মাত্র হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে এবং বাজারে শুধুমাত্র প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিং মল সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৯। আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবলমাত্র এটিএম এর মাধ্যমে করা যাবে

১০। উক্ত এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ নমুনা পরীক্ষার করতে হবে, শনাক্ত রোগীরা আইসোলেশনে (বাড়িতে। আইসোলেশন সেন্টারে) থাকবে।

১১। মসজিদ উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইবাদত করা যাবে।

ইয়েলো জোন মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা

১। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষিকাজ করা যাবে

২। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা ও কৃষি পণ্য উৎপাদন কারখানায় ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করবে এবং জনসংকীর্ণ কারখানাতে ৩৩ শতাংশ কর্মী বর্ধিত শিফটে কাজ করা যাবে

৩। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করবে। বাকিরা বাসা থেকেই কাজ করবে।

৪। ৩০ জনের বেশি জন সমাবেশ করা যাবে না।

৫। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবে, রিক্সা, ভ্যান, সি এন জি বা ট্যাক্সিতে একজন করে চলাচলা করবে ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করা যাবে।

৬। সড়ক পথ, নদী পথ ও রেল পথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা যাবে।

৭। জোনের ভিতরে ও বাহিরে মালবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে।

৮। এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান, ওযুধের দোকান খোলা থাকবে, রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকানে কেবল মাত্র হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে এবং বাজারে শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিং মল, সিনেমা হল, জিম স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৯। আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করা যাবে।

১০। উক্ত এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করতে হবে, শনাক্ত রোগীরা আইসোলেশনে (বাড়িতে বা আইসোলেশন সেন্টারে) থাকবে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত আইসোলেশনে ব্যবস্থা থাকবে।

১১। মসজিদ উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইবাদত করা যাবে।

সবুজ জোন নিম্ন ঝুঁকির এলাকা

১। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষিকাজ করা যাবে

২। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা ও কৃষি পণ্য উৎপাদন কাজ করা যাবে।

৩। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খোলা থাকবে

৪। ৩০ জনের বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না।

৫। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা যাবে তবে প্রয়োজন ছাড়া কিংবা আড্ডা দেওয়ার জন্য বের হওয়া যাবে না

৬। সড়ক পথ, নদী পথ ও রেল পথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা যাবে।

৭। জোনের ভেতরে ও বাহিরে মালবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে।

৮। এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান, ওষুধের দোকান, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, সেলুন, বাজার ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। তবে শপিং মল সিনেমা হল, জিম স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৯। আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করা যাবে।

১০। উক্ত এলাকার রোগীর নমুনা পরীক্ষার সহজগম্যতা থাকতে হবে,শনাক্ত রোগীরা আইসোলেশনে (বাড়িতে বা আইসোলেশন সেন্টারে) থাকবে।

১১। মসজিদ উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইবাদত করা যাবে।

এছাড়া সব জোনের জন্য পালনীয় সাধারণ নিয়মাবলীতে বলা হয়েছে –

১। এলাকার সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে, হাত ধোয়া, জীবাণু মুক্ত করণ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

২। করোনা রোগ/সংক্রমণ শনাক্তকরণ, তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা প্রদান এর ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। কন্টাক্ট ট্রেসিং ও তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।

৪। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, অসুস্থ ব্যক্তি পরিবহনকারী যান ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করবে

৫। সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে

৬। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া জনগন এক জোন থেকে অন্য জোনে যাতায়াত করতে পারবেনা। প্রত্যেক এলাকায় সীমিত পরিমাণে প্রবেশ ও বহিরাগমন পয়েন্ট নির্ধারণ করে কঠোরভাবে জনগনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করবে।

৭। এ সকল কার্যক্রমের তদারকির জন্য কার্যকরি সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং মাঠকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

গত শনিবার (১৩ জুন) করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভায় রাজধানী ঢাকার ৪৫ (দুই সিটির) ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ১১ এলাকাকে ‘ রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে রেড জোন এলাকা চিহ্নিত করবেন বলে সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে।

উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেড জোন হিসাবে ধরা হয়েছে: বসুন্ধরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যে ২৮ এলাকাকে রেড জোন হিসাবে ধরা হয়েছে: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরিবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

চট্টগ্রাম সিটির যে এলাকা রেড জোনে রয়েছে: চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। এর বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেড জোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে রেড জোন হিসাবে ।

এই বিভাগের আরও খবর