চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডার কারসাজীতে ৪ সিন্ডিকেট চক্র
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডার, রেগুলেটর এবং সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিলিংয়ে পাইকারিদের ৪টি সিন্ডিকেট মাত্রাতিরিক্তভাবে দাম কারসাজির তথ্য পেয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-হাসান ট্রেডার্স, মেসার্স ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্ক, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ এবং জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড।
বুধবার জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বৃহৎ অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ পরিদর্শনে গিয়ে বাজারে মধ্যসত্ত্বাভোগী পাইকারি সিন্ডিকেট অতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করা এবং এর সাথে রয়েছে কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সমৃক্ততা পেয়েছেন জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রামের সাগরিকায় লিন্ডে বাংলাদেশের প্রধান অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র বুধার সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। এসময় জানা যায় যে, ১ দশমিক ৪ কিউবিক লিটার মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার (৯৯.৯% ঘনত্বের) এর রিফিলিং দাম ১২২ টাকা। কিন্তু আন্দরকিল্লা এবং সদরঘাট এলাকায় বিভিন্ন পাইকারি দোকানিরা রিফিলিংয়ের ক্ষেত্রে দাম রাখছে ১০০০ টাকার-ও বেশি।
লিন্ডে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, গত দুইদিন জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে যেসক প্রতিষ্ঠানকে মাত্রাতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যক্তি পর্যায়ে বিক্রি এবং বেশি মূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস রিফিলিংয়ের জন্য জরিমানা করা করা হয়েছে তারা লিন্ডে বাংলাদেশের কোনো বৈধ প্রতিনিধিও নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- হাসান ট্রেডার্স, ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কস, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান তাদের প্যাডে লিন্ডে বাংলাদেশের নাম লিখে রেখেছে কিন্তু লিন্ডে বাংলাদেশের বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে শুধুমাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রেসক্রিপশন এবং এনআইডি কার্ডের ভিত্তিতে বিক্রি এবং রিফিলিং হচ্ছে। লিন্ডে বাংলাদেশের মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর-ও বাংলাদেশে নাই। তারা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডিমান্ড/প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে লিন্ডের তৈরিকৃত মেডিকেল গ্রেড সিলিন্ডারে অক্সিজেন সরবরাহ করে। লিন্ডে বাংলাদেশের নামের অপব্যবহার করে বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ (মালিক: শহীদ) অক্সিজেনের ব্যবসা করছে। লাইসেন্সবিহীন ভাবে এবং মাত্রাতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার পেপারলেসভাবে (ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ ছাড়া) বিক্রির দায়ে গত মঙ্গলবার (৯ জুন) ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক চকবাজার থানাধীন বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলো।
লিন্ডে বাংলাদেশের বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন রয়েছে।
অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেশি থাকায় জরুরি ভিত্তিতে লিন্ডে বাংলাদেশ মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত করছে। আগামী ২০ জুন থেকে মেডিকেল গ্রেডের সরবরাহ আরো বাড়বে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় চার হাজারের মতো মেডিকেল গ্রেড সিলিন্ডার সাপ্লাই চেইনে যুক্ত হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের পাইকারিদের সিন্ডিকেট যারা অক্সিজেন সিলিন্ডার, রেগুলেটর এবং সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিলিংয়ে এর মাত্রাতিরিক্তভাবে দাম কারসাজি করছে তারা হচ্ছে, হাসান ট্রেডার্স, মেসার্স ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্ক, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ এবং জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড।
বাংলাদেশে মেডিকেল গ্রেড (৯৯.৯%) পিউরিটির অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, লিন্ডে বাংলাদেশ (সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান) সাগরিকা, Spectrum Oxygen Ltd (বেসরকারি) কালুরঘাট, ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ।
এসব কোম্পানির কোনো ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর নেই। তারা হাসপাতাল গুলোতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট প্রস্তুত করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে প্লান্টে অক্সিজেন গ্যাস সাপ্লাই করে। এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে ব্যক্তি পর্যায়ে বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট রোগীদের জন্য ১ দশমিক ৪ কিউবিক লিটার (১৪০০ লিটার অক্সিজেন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন) সিলিন্ডার বিক্রয় করেন। যেগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষাকৃত এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহার যোগ্য সিলিন্ডার।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, সাগরিকায় লিন্ডে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে জানা গেলো যে সকল প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে পাইকারি পর্যায়ে যারা অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করছে তারা কেউই মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলার কিংবা ডিস্ট্রিবিউটর নয়। লিন্ডে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামক যে প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা করা হয়েছে তাদেরকে লিন্ডে বাংলাদেশ ২০১৬ সালে কালো তালিকাভুক্ত করেছিলো।
লিন্ডে বাংলাদেশ যেসকল হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই করে সেসব প্রতিষ্ঠানে লিন্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিসিমল্লাহ এন্টারপ্রাইজ কাজ করতো। চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডার রিফিলিং এবং সিলিন্ডার সরবরাহের সময় টেম্পারিং করায় বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ কে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো।
কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ভিত্তিক বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন হিসেবে বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন প্রস্তুতকারীদের মধ্যে চট্টগ্রামে যে সকল বেসরকারি/ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো হলোঃ সিমা এন্টাইরপ্রাইজ, মদিনা এন্টারপ্রাইজ, এয়ার গ্যাস, গোল্ডেন অক্সিজেন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং জিডি সুবেদার ইন্ডাস্ট্রিজ, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের বাইরে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন যথাযথভাবে প্রস্তুত করে সরবরাহ হচ্ছে কিনা সেটি জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখা হবে।